বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪ মামলা ২৪ জন কারাগারে

12

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাজীর দেউড়িতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলা করা হয়েছে। নগর বিএনপির আহব্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ ২৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৩শ জনকে আসামি করে এসব মামলা করে পুলিশ। গত সোমবার মধ্যরাতে নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলাগুলো করা হয়।
এদিকে কাজীর দেউড়ি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালত তাদের কারাগারে পাঠাতে আদেশ দেন বলে জানা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, কাজীর দেউড়িতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় তিন পুলিশ কর্মকর্তা বাদী হয়ে চারটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের সার্জেন্ট চয়ন নাইড়ু বাদী হয়ে ৫৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আজাদ হোসেন বাদী হয়ে ৯৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে দুইটি মামলা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় মিরসরাই থানার উপপরির্দশক (এসআই) আল আমিন বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলা অভিযোগে কোতোয়ালী থানা পুলিশ, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশ, রেডিসনের সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জেলা পুলিশ এবং সংর্ঘষের ঘটনার জন্য কোতোয়ালী থানা পুলিশ সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করে।
এর আগে সোমবার বিকেলে নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্যসহ ২০ জন আহত হন। এ সময় কাজীর দেউড়ি এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের একটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেইসঙ্গে বেশ কয়েকটি দোকানও ভাংচুর করেন তারা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীকে আটক করে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানা গেছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, ঘটনায় চারটি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলা করা হয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। মিরসরাই থানা পুলিশের একটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে চার পুলিশ সদস্যকে আহত করার ঘটনায় মামলাটি করা হয়।
এদিকে সোমবার রাতে নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্করসহ শীর্ষ নেতাদের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে তারা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাসা থেকে অন্য জায়গায় অবস্থান নিয়েছে।
মামলায় আসামি করা হয়েছে উত্তর জেলা বিএনপির আহŸায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারকেও। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি পূর্বদেশকে বলেন, কাজীর দেউড়ির ঘটনায় যে মামলা হয়েছে তাতে আমাকেও আসামি করা হয়েছে বলে শুনেছি। অথচ গত ১০ দিন ধরে আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। চট্টগ্রামেই ছিলাম না, তবুও আসামি করা হলো।
এদিকে আহত পুলিশ সদস্যরা সবাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা হলেন সিএমপি ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক বিপ্লব বড়ুয়া, জেলা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জলৎকার চাকমা, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ওসমান গনি, অজয় চাকমা ও কনস্টেবল লিনা আকতার।
এদিকে কাজীর দেউড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালত এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২৪ জনকে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ১৮ জনকে একটি ও বাকি ৬ জনকে দুইটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত ১৬ জানুয়ারি ১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরের নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করছিল নগর বিএনপি। কাজীর দেউড়ি মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ হয় এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। সড়কে যানবাহন ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।