বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়

9

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেছেন, বৈশ্বিক বাস্তবতার আলোকে জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির ফলে যে দৃশ্যমান সংকট চলমান রয়েছে, তা সাময়িক হলেও বিএনপি পরিকল্পিতভাবে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তারা বৈধ ও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সব ধরনের নৈতিক শক্তি ও সাহসকে ধারণ করে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলে বিএনপির অশুভ, অসাংবিধানিক কর্মপন্থা প্রতিহত করতে হবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে দেশপ্রেমী জনতাকে মাঠে নামতে হবে।
গতকাল রবিবার বিকেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে নগরীর কাজীর দেউরীস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না, বাংলাদেশের জন্ম না হলে বাঙালি চিরদিন শৃঙ্খলিত হয়ে থাকতো। অথচ ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অনুযায়ী ’৭১ এর পরাজিত শক্তির প্রত্যক্ষ ইন্ধনে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালিকে কলঙ্কিত করেছে। সেদিনের এই মর্মান্তিক ঘটনাটির পর অনেক বিশ্ব নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছিলেন, যে জাতিকে যিনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, তাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে জাতিটি বেঈমান হিসেবে পরিচিতি পায়। আমাদের জন্য এর চেয়ে বড় কোনো লজ্জা আর হতে পারে না। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা হত্যা করতে সাহস পায়নি, বঙ্গবন্ধুও বিশ্বাস করতেন কোনো বাঙালি তাকে হত্যা করতে পারে না। অথচ বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির হাতেই নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ দিতে হলো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পেছনে জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল কি? অবশ্যই ছিল। কারণ তিনি একজন অধীনস্থ সামরিক কর্মকর্তা হয়েও ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত করার কথা জানালেও তিনি তাদের কোর্ট মার্শাল করাননি। বরং এও বলেছেন যে, তোমরা যদি সাকসেসফুল হতে পারো, তাহলে আমি আছি। এর অর্থটি কি দাঁড়ায়? জিয়াউর রহমান প্রস্তুত ছিলেন তিনি একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলবেন এবং পরিস্থিতির মওকা পেয়ে তিনি এই দেশকে আবার পাকিস্তান বানাবেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া ঠিক তা-ই করেছেন এবং তার উত্তরসূরী স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একই কাজটি আরো ভালোভাবে করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যেখান থেকে টেনে তুলে আজ উচ্চতার আসনে বসিয়েছেন, তা অনেকের সহ্য হচ্ছে না। এরা জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা ধরনের মিধ্যাচার করছে। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের উত্তরসূরী এবং এই চট্টগ্রামের মাটিতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্নজাল বুনেছেন এমএ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরীকে ঘিরে। এই চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তাটি বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রামের মাটিতেই বঙ্গবন্ধু অনেক স্বপ্ন বুনন করেছিলেন। সে সকল স্বপ্ন বাস্তবায়নে চট্টগ্রামবাসীকেই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আগস্ট মাসে আমরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হারাইনি, এ মাসেই আমরা হারিয়েছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুভাষ চন্দ্র বসুসহ অনেক বাঙালি মনিষীকে। আবার এই মাসটি ষড়যন্ত্রের কুটজালে ভরা। এ মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়। তাই শোকের এই মাসটি আমাদের শক্তি ও সাহস যুগিয়ে বঙ্গবন্ধুর আরাধ্যের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশকে ভালোবেসে সর্বোচ্চ ত্যাগের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তাকে নানা ধরনের টোপ দিলেও তিনি তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছিলেন এবং ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের পথে এগিয়ে ৭ মার্চে তিনি নির্ধারিত করে দিয়ে গেছেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। এই সত্যটি বিএনপি কিছুতেই স্বীকার করতে চায় না। কেননা বিএনপির জন্ম হয়েছে ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে, তাদের ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল। আদর্শ ও নীতিহীন বিএনপির উদ্দেশ্য হলো প্রতারণা ও মানুষকে জিম্মি করে অসৎ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করা।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আলহাজ নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সম্পাদক মÐলীর সদস্য আলহাজ বদিউল আলম, জালাল উদ্দীন ইকবাল, দিদারুল আলম চৌধুরী, জোবাইরা নার্গিস খান, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, এড. কামাল উদ্দীন আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কৃষাণ চৌধুরী, আব্দুল লতিফ টিপু, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, মো. জাবেদ, হাজী বেলাল আহমদ, মোর্শেদ আক্তার চৌধুরী প্রমুখ।
সভার শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন, পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করে মোনাজাত পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাজী জহুর আহমদ। বিজ্ঞপ্তি