বিএনপির ৫৬ এজেন্টকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ

28

নির্বাচনের একদিন আগে পুলিশ ৫৬ জন নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। এর আগে গত এক সপ্তাহে ৬৯ জন নেতকার্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
গত দুইদিনে গ্রেপ্তার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিষয়ে আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, তাদের মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেন সোমবার রাতে ৫৬ জন নির্বাচনী এজেন্টকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে দুপুরে এক সপ্তাহের মধ্যে বিএনপির ৬৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনের এক দিন আগে ৫৬ জন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যেহেতু এজেন্টরা নির্বাচনের একটি অংশ। তাই নির্বাচনী এজেন্টদের ছাড়িয়ে আনতে কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছি। যদি কমিশন এতে বিফল হয়, তাহলে তাদের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসা উচিত।
নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির প্রার্থীর বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন বিএনপির পক্ষ থেকে। বিএনপি নেতারা বলেন, দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনস্থ বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়েও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেআইনভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এরপর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মী ও নির্বাচনে বিএনপির এজেন্টদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। সর্বশেষ গত সোমবার ভোর পর্যন্ত অন্তত ৬৯ জন নেতাকর্মীকে আটকসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ গিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়েছে। তারা দলীয় কার্যালয়ের মাঠের পোস্টার-ব্যানার ছিড়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুলিশ বাসায় বাসায় তল্লাশির নামে হয়রানি করেছে।
নগর বিএনপির সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, এলাকাতে কোন নেতাকর্মীকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এজেন্টদের ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি করেছে। অনেক নেতাকর্মী, এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে। এজেন্টের তালিকা নিয়ে তারা ঘরে ঘরে গিয়ে হামলা করেছে। আমরা নির্বাচনে মাঠে আছি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নাগরিক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক ও নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম বলেন, এলাকাভিত্তিক আমাদের লোকদের এরেস্ট করা হচ্ছে। ৪০০ এর মতো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছে। আমাকে ও আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করছি নির্বাচনে থাকার। কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে এই অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।
বিএনপির নির্বাচনী প্রচার সেল থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত এজেন্ট ও নেতাকর্মীরা হলেন- কোতোয়ালীতে থানা মো. ইলিয়াছ মিয়া, মো. শাহীন, আশ্রাফুল ইসলাম অনিক, মো. আলী, মোহাম্মদ কিবরিয়া, মো. মামুন, মোহাম্মদ আনোয়ার, আব্দুর রাজ্জাক, মনজুর, নুর মোহাম্মদ, আমিনুর রহমান মিয়া, আবু নাছির সাজ্জাদ, আউনুর ইসলাম ও শহীদুল রনি।
আকবর শাহে মো. বেলাল হোসেন, মো. মানিক, দোলেয়ার হোসেন কালা, আবু তাহের, মনির, গোলাপ হোসেন, রাসেল, রাব্বি, মো. শরীফ, তানবীর আলম রুবেল, শাহ আলম, মনির চৌধুরী মুনমুন।
বায়েজিদে জাবেদ ওমর, মনির খসরু, ইলিয়াছ, মহিন, জাহাঙ্গীর, মিজান, মনির হোসেন ভুট্টো, শাকিল, শহিদুল ইসলাম, সৈয়দ জয়নাল, মিলন, মাছুদ, লাবলু, রফিক, মইনু উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, রাতুল, মো. মামুন, মো. করিম ও মাসুদ রানা। হালিশহরে মো. মুরাদ মনির হোসেন ও মনিরুল ইসলাম। চান্দগাঁও-এ মোশররফ হোসেন ও ওসমান।
পাঁচলাইশ পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে মামুন খন্দকার, মো. হেলাল, কাজী সামশু ও শোলকবহর ওর্য়াডে আবু সিদ্দিক। খুলশীতে জাহিদুল ইসলাম জাবেদ।
বাকলিয়ায় খোরশেদ আলম, মোহাম্মদ সুজন, মকবুল হোসেন, রেজিয়া বেগম মুন্নি, এমদাদুল ইসলাম সাকিল,কাদের, লাগুন, মিন্টু, শামীম, এরশাদ, নবাব, তকি, রুদ্রর, হোসেন, বাছির আলী, মো. আইয়ূব ও খোরশেদ। পাহাড়তলীতে মো. বেলাল, অপি ও ওয়াহিদ।
পতেঙ্গায় কায়সার আলম, ইকবাল হোসেন, বখতেয়ার উদ্দীন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল হালিম (ডেভিড), সেলিম সরদার, আলী রাশেদ, আলী হোসেন, আবু ও সায়দুজ্জামান রণি। বন্দর থেকে মো. আসলাম, শামসুদ্দিন, আরমান শুভ, মো. ইসমাইল, মো. আব্বাস, আলী হোসেন মো. আবু ও মো. দেওয়ান।
ডবলমুরিংয়ে কাইয়ূম রিপন, জাহেদ হোসেন বাবু, জাহিদ হাসান বাবু, কাইয়ূম হোসেন রিপন, ইকবাল হোসেন, মো. আব্দুল হালিম সওদাগর ও মো. মহসীন।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি জাকির হোসেন, নূর মোহাম্মদ, আমিনুর রহমান মিয়া, আবু নাসের সাজ্জাদ, আইনুল ইসলাম জুয়েল, শহিদ উল্লাহ রণিসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
এদিকে গতকাল বিএনপির গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের আদালতে হাজির করা হয় একেবারে পড়ন্ত বিকেলে। এ সময় তাদের আত্মীয় স্বজনরা আদালত এলাকায় ভিড় করেন।