বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবে আ.লীগ নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া

14

ঢাকা প্রতিনিধি

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, টানা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন না করার নিয়ম চালুসহ ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার বিকেলে ঘোষিত এই রূপরেখাকে ‘হাস্যকর’ এবং ‘স্ট্যান্টবাজি’ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে। এখন আবার তারাই রাষ্ট্রের মেরামতের কথা বলছে। এখন দেশের সবকিছুই ভালো আছে। তাই মেরামতের কিছু নেই। ‘যারা (বিএনপি) রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে তারা কী করে দেশের মেরামত করে’ এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে এখন তারাই আবার মেরামতের কথা বলে, যেটা হাস্যকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তা মেরামত করেছেন। বিএনপির আমল থেকে এখন সবকিছু ভালো আছে। দেশের মধ্যে যা মেরামত, তা আওয়ামী লীগই করছে। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলন নিয়ে গঠিত খাদ্য উপকমিটির বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বিএনপি ঘোষিত ২৭ দফাকে স্টান্টবাজি বলে দাবি আরো বলেন, এতে আন্দোলন জমবে না, মানুষ বিভ্রান্ত হবেন না। তিনি বলেন, যে রাষ্ট্র আজকে বিশ্বের বিস্ময়। ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ উন্নয়নের দৃশ্যপটে ভিন্ন। যে দেশকে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দক্ষ নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তা মেরামত করেছেন। এখন ২০৪০ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতন্ত্র, ভোট চুরি আমরা করি না। তারাই ভোট চুরি করেছে, ভোট জালিয়াতি করেছে। দলীয় লোক দিয়ে আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এসব ইতিহাস নতুন কিছু নয়।
সাধারণ মানুষ মনে করেন, এ দেশের মুক্তির কান্ডারি শেখ হাসিনা। এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করেন, বিএনপি জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষক এবং সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে ২৭ দফা বাস্তবায়ন করা হবে, বিএনপির এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যদি ক্ষমতায় আসে, যদির কথা নদীতে ফেলে দেন। যদি আসেন, তাহলে হবে। না হয়, হবে না।
তারা (বিএনপি) কি রাষ্ট্র সংস্কারের নামে দেশকে জিয়াউর রহমানের মার্শাল ডেমোক্রেসিতে (সামরিক গণতন্ত্র) নিয়ে যেতে চান রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির ঘোষিত রূপরেখাকে এভাবেই মূল্যায়ন করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বিএনপির ২৭ দফা প্রসঙ্গে গতকাল সকালে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যারা রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল আর ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করেছিল, সেই বিএনপি নেতাদের মুখে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা হাস্যকর।
হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার বলে তারা যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, সেটা আমি দেখেছি। ১৩ নম্বর প্রস্তাবে আছে, দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো আপোস করা হবে না।
যারা পরপর পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল, যাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত, তারা যখন এ সমস্ত কথা বলে, তখন মানুষ হাসে, গাধাও হাসে। খন্দকার মোশাররফ সাহেব তো ছাত্রলীগ করতেন। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করার জন্য রাজনীতির কাকরা সমবেত হয়ে বিএনপি গঠন করেছিল। এই উচ্ছিষ্ট গ্রহণকারী নেতারা যখন রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে, তখন সেটি হাস্যকর ছাড়া অন্য কোনো কিছু নয়।
বিএনপি ঘোষিত ২৭ দফা রূপরেখাকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর মতে বিএনপির মুখে মানবাধিকার একটি ভাঁওতাবাজি। গতকাল দুপুরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির ২৭ দফার রূপরেখার ১৪ দফায় গুম, খুন ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে দেশে হত্যা, গুম, খুন হয়েছে। তখন ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছে। অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে ৫৫ জন মানুষ মারা হয়েছে। একজন রাষ্ট্রদূতের ওপর বোমা হামলা হয়, তিনি তখন প্রাণে বাঁচলেও অনেকেই মারা যান। সে কারণে বিএনপির মুখে মানবাধিকার একটি ভাঁওতাবাজি। এটা আমাদের কাছে হাসির খোরাক ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রসঙ্গত, বিএনপি নির্বাচনে জয় লাভের পর একটি জাতীয় সরকার গঠন করে তাদের ঘোষিত ২৭ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে। সংবিধান সংস্কার, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন বাতিল, নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থার প্রবর্তন, মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা করা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারসহ গত সোমবার ২৭ দফা রূপরেখার কথা জানিয়েছে বিএনপি। দলটি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথাও বলেছে।