বিএনপির আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত

26

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশন (ইসি) রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন পক্রিয়া শুরু করেছে। এই সময়ে এসে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের রোডম্যাপ প্রায় চূড়ান্ত করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের মাধ্যমে তৈরি করা আন্দোলনের রূপরেখা দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এরপর দেশবাসীর সামনে এ রূপরেখা তুলে ধরবে বিএনপি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামরা ব্যবহার এবং শহরাঞ্চলের আসনগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করার মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করার রোডম্যাপের কথা জানিয়েছে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন। র‌্যাডম্যাপ নিয়ে ইসি যখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে হাঁটছে বিএনপি। দলটি ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটিয়ে ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও বলে আসছে দলটি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণের ভোটাধিকারের দাবি আদায়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে বেশ কিছুদিন ধরে সংলাপ চলছে। সব দলই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া ও যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। শিগগির যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচনোত্তর রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা প্রকাশ করা হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, বিএনপি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করছে। ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন নিয়েই এ রূপরেখা। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেখানে। আন্দোলনের গতি প্রকৃতি বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে রূপরেখায়। তাছাড়াও আন্দোলনে ভ‚মিকা রাখা বিজয়ী ও পরাজিত দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, সাংবিধানিক সংস্কার, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠনসহ রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি দলটির ভিশনকে নাগরিক সমাজের মধ্যে উপস্থাপন করে তাদের মতামত সংগ্রহ করার পরিকল্পনাও আছে। এ লক্ষ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে চলছে বিএনপির মিডিয়া সেল। এরই মধ্যে সিলেটে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আগামী বছরের নভেম্বর থেকে পরের বছরের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়রি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই সঠিক সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে রোডম্যাপের মাধ্যমে এগুচ্ছে ইসি। রোডম্যাপের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার মাধ্যমে সব কাজ বাস্তবায়ন করতে চায় ইসি। অনেকে ইসি নিয়ে আস্থাহীনতায় থাকলেও আগামীতে কর্মকাÐ দেখে আস্থাশীল হবে বলেও মনে করছে ইসি।
যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়ে ইতিমধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। সংলাপে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্নির্মাণ করার কথা উঠে এসেছে। এ লক্ষে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে সেগুলোও স্থির করেছে দলটি। বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার পক্ষে নয় বলে জানিয়েছে সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলোকে। কার্যকর গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার পরিকল্পনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান ছিলো সংলাপে।