বিএনএমে যাইনি সাকিবও তার পথ বেছে নিয়েছেন

7

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আগে ‘কিংস পার্টি’ নামে পরিচিতি পাওয়া ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম’ এর সঙ্গে তার নিজের এবং ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততার যে খবর পত্রিকায় এসেছে, তা ‘সঠিক নয়’।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বনানীতে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ দাবি করেন। খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, কেন আমি বিএনএমে যোগদান করি নাই, কেন আমি বিএনপি ছাড়ি নাই। এতদিন পর আবার এই সংবাদ। এটা তো গোপন কোনো কিছু না। আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছেন তারা (বিএনএম), আমি প্রস্তাব গ্রহণ করি নাই, বিএনপিতে রয়েছি।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমি ৩২ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে রয়েছি। আমার পক্ষে দল ত্যাগ করা সম্ভব নয়। বয়স হয়েছে আমি আর কিছুদিনের মধ্যে অবসরে যাবো। সামরিক বাহিনীর কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমার কাছে আসে নতুন একটি দল খোলার জন্য। তারা হয়তো ভেবেছে আমি বিএনপি ত্যাগ করতে পারি কারণ বিএনপির সঙ্গে মাঝে মাঝে আমার দ্বিমত থাকে। কিন্তু এ ধরনের কোনো বিষয় নেই। আমি বিএনপির সঙ্গেই আছি, বিএনএমে যোগ দিইনি।
আওয়ামী লীগের টিকিটে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাগুরা-১ আসনের এমপি হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তবে নির্বাচনের কিছুদিন আগে সাকিব ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নতুন দল বিএনএমে যোগ দিয়েছিলেন বলে খবর এসেছে দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে।
বিএনপির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যে সাবেক মন্ত্রী হাফিজকে নিয়েও গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের গত সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ দাবি করেছিলেন, হাফিজের নেতৃত্বে নতুন দল হচ্ছে এবং তারা ভোটে যাবে। পরে হাফিজ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, তিনি দল গঠন করছেন না।
সোমবার একটি দৈনিকে একটি ছবি প্রকাশ করে বলা হয়, বিএনএম এর ফরম পূরণ করে সাকিব তুলে দেন হাফিজের হাতে। এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন করলেও সাকিব ধরেননি বলে দৈনিকটির ভাষ্য।
সাকিব এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও গতকাল সংবাদ সম্মেলন ডাকেন হাফিজ।
তিনি বলেন, সাকিব আল হাসান দেশের গৌরব, বিশ্বের সেরা অল রাউন্ডার। কোনোদিন রাজনীতি করে নাই। তিনি রাজনীতি করতেই পারেন। সাবেক ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমার কাছে এসেছিলেন, আমি তাকে কোনো উৎসাহ দিইনি।
আমি যোগদান না করায় তিনিও তার পথ বেছে নিয়েছেন। যেখান থেকে সহজে জেতা যাবে, সেই নির্বাচনে কোনো প্রতিপক্ষ থাকবে না, সম্পূর্ণ পাতানো এই নির্বাচনে তিনি এমপি হয়েছেন, এটি তার বিষয়। এ নিয়ে যে কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এটা সঠিক নয়।
বিএনপি নেতা হাফিজ বলছেন, সাকিবের সঙ্গে সেই সাক্ষাতের এতদিন পরে দুটি পত্রিকা ‘মিথ্যা প্রচার’ করেছে এবং তাতে তিনি ‘মর্মাহত’।
আমার ধারণা জন্মেছে, সরকারের বিভিন্ন অপকর্ম লুকিয়ে রেখে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র নিবদ্ধ করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে এই বিএনএম সৃষ্টির কাল্পনিক কাহিনীর অবতারণা তারা করেছে। আমি বলতে চাই, আমি নির্বাচন কমিশনে কাউকে পাঠাইনি, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ কিংবা তদবির করার জন্য কাউকে কখনো পাঠাই নাই।
বিএনএম এর অফিসও চেনেন না দাবি করে হাফিজ বলেন, নির্বাচনের দুই মাস আগেই বলেছি, আমি বিএনপি ছাড়ব না, কোনো পাতানো নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনের একমাস আগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলাম। এমনভাবে পত্রিকাগুলো সংবাদ প্রচার করেছে যে তারা বিরাট একটা রহস্যের ভান্ডার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
এখানে গোপন কিছু নাই। আমি সব সময় বলে এসেছি ‘মাই লাইফ ইজ আ ওপেন বুক’। লজ্জিত হওয়ার কোনো কাজ করি না, গোপন কোনো কাজ করি না।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, শারীরিক কারণে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন, কিন্তু গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ‘হাফিজ দল ত্যাগ করতে পারেন’। তাতে বিএনপির ভেতরে ‘চাঞ্চল্য’ সৃষ্টি হয়।
কয়েকজন আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন, তারা নতুনভাবে রাজনীতি করতে চান। আমি তাদের নিরস্ত করেছি।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ভারতে অবস্থানত সালাহউদ্দিন আহমেদ সে সময়ে যোগাযোগ করে ‘প্রকৃত বিষয়’ জানতে চাইলে তাদেরকেও বিষয়টি ‘স্পষ্ট’ করেছেন বলে হাফিজের ভাষ্য।
আমি বলেছি, এগুলো সরকারি প্রপাগান্ডা। আমি বিএনপি ছেড়ে কোথাও যাব না। এই বয়সে তো আমার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নাই। দুই বার মন্ত্রী হয়েছি, আর কত? ৬ বার এমপি হয়েছি জনগণের ভোটে, গুড এনাফ। আমার তো নতুন দলে যোগদানের দরকার নাই, আমার কিংস পার্টি খোঁজার দরকার নাই।