বাড়তি টোল আদায় জানে না রেলওয়ে

87

কালুরঘাট সেতু টোল-ইজারা নিয়ে কারসাজি শুরু ২০১৫ সালে। সে সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা, যানবাহন চলাচল কমে যাওয়ার অজুহাতে ইজারা দর কমাতে সোচ্চার হন ব্যবসায়ীরা। সে যাত্রায় পরের অর্থ বছরের তুলনায় এক কোটি ২১ লক্ষ টাকা কমিয়ে তিন কোটি ২৩ লাখ টাকায় ইজারা দিতে বাধ্য হয় রেল কর্তৃপক্ষ। এভাবেই ইজারা দর কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেও সেতু ব্যবহারকারী গাড়ি থেকে বাড়তি টোল আদায় অব্যাহত ছিল।
শেষতক চলতি অর্থ বছরে তৃতীয়বারের মতো চার কোটি চার লক্ষ টাকায় কালুরঘাট সেতুর ইজারা পেয়েছেন ‘এএন এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। গত ২৪ মার্চ থেকে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ টোল আদায় শুরু করতেই বিপত্তি বাধে। বাড়তি টোল আদায়কে কেন্দ্র করে সেতুর দুই পাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এতে যাত্রী দুর্ভোগ বেড়ে গেলে গত ২৭ মার্চ ইজারাদার কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা বৈঠকে বসে স্থানীয় সংসদ সদস্য। সে বৈঠকও ফলপ্রসু না হওয়ায় বাড়তি টোল দিয়েই সেতু ব্যবহারে বাধ্য হয়েছে পরিবহনগুলো। এ টোল আদায় নিয়ে সেতু ইজারাদার ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক বিরাজ করছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে বাড়তি টোল প্রত্যাহার না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার হুমকিও দিয়েছেন তারা। তবে টোল বৃদ্ধির বিষয়টি অবগত নন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা পূর্বদেশকে বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর টেন্ডার হয়েছে। এ সেতুতে যান চলাচলকারী গাড়ি থেকে বাড়তি টোল আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এখন নির্বাচনী দায়িত্বে ফেনী আছি। দপ্তরে যোগদান করেই এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।’
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, বিগত সময়ে কালুরঘাট সেতু পারাপারে প্রতি টেম্পু থেকে ৩০ টাকা টোল আদায় করা হতো। যা এখন ৪০টাকা দাবি করা হচ্ছে। একইভাবে প্রতিটি সিএনজি ট্যাক্সির টোল ৫ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা, মাইক্রোবাসে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৭০ টাকা, ছোট আকৃতির বাসে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা এবং বড় আকৃতির বাসে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। তবে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাড়তি টাকা দিয়ে এ সেতু ব্যবহার করছে ভারী যানবাহন। তবে বালুভর্তি ট্রাকের টোল এক টাকাও বাড়ানো হয়নি। বালু ব্যবসায়ীদের সাথে ইজারারদার কর্তৃপক্ষের সখ্যতা থাকায় এসব গাড়ির টোল বাড়ানো হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতু নিয়ে রেলওয়েতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে পিছিয়ে পড়া অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে সেতুর ইজারা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে রেলওয়ের ঠিকাদারির সাথে যুক্ত একটি চক্র এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন। তারাই নানা অজুহাতে কালুরঘাট সেতু ইজারা নিজেদের পক্ষে নেন। এক্ষেত্রে রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজে ব্যর্থ হলে আদালতের ধারস্থ হন এ সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সাথে রেলওয়ের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সখ্যতাও রেল অঙ্গনে আলোচিত।
চট্টগ্রাম অটোরিকশা, অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর টোল বর্ধিতকরণ নিয়ে কয়েকদফা বসেছি। সেতু কর্তৃপক্ষের সাথেও যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের বলেছেন গতবারের চেয়ে এবার নাকি ৬০ লক্ষ টাকা বাড়তি দিয়ে সেতু ইজারা নিয়েছেন। খবর বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে টেক্সিতে ১৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা, টেম্পুতে ৩০ টাকার জায়গায় ৪০ টাকা নেয়া হচ্ছে। আমরা বাড়তি টোল কমাতে ইজারাদারের সাথে আবারো বসার চেষ্টা করবো। অন্যথায় ফেডারেশনের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’
কালুরঘাট সেতুর ইজারাদার মো. আইয়ুব আলী পূর্বদেশকে বলেন, ‘সিএনজি টেক্সিতে গতবারের চেয়ে মাত্র পাঁচ টাকা বাড়িয়েছি। সরকার ৩০টাকা বাড়াতে বলেছে। সরকার চার বছর পর শিডিউলে বাড়িয়েছে বলেই আমরা টোল বাড়িয়েছি। সরকার শিডিউল মোতাবেক আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। নতুন ব্রিজের তুলনায় আমরা টোল অর্ধেক কম নিচ্ছি। এ সেতু চার কোটি চার লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিলেও ভ্যাট টেক্স মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার উপরে সরকারকে টাকা জমা দিতে হয়েছে। এবারসহ আমরা দুইবার ইজারা নিয়েছি। এর আগে একবার আদালত থেকে ইজারা নিয়েছিলাম।’
বোয়ালখালীর গোমদন্ডী এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা দিদারুল আলম পূর্বদেশকে বলেন, ‘বোয়ালখালীতে বড় কোন গাড়ি চলাচল করে না। ছোট গাড়িই একমাত্র ভরসা। সেতুর টোল বর্ধিত করার কারণে গাড়ি ভাড়াও বাড়িয়ে দিচ্ছে গাড়ি চালকরা। বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন গাড়ি চালকদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডা হচ্ছে। টোল বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে যাত্রীদের যাতায়াত ব্যয়ে।’