বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

7

 

মহামারি করোনার মোহ আমাদেরকে আরও কত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছে-তার আয়ত্ব নেই। অথচ দৃষ্টির বাইরে থাকা এমন সমস্যাগুলোও একদিন আমাদের জন্য দুঃখ বয়ে আনতে পারে। এধরনের মারাত্মক এক সংকট আমাদের সামনে উপস্থিত। এটির নাম ডেঙ্গু, যা নতুনভাবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এডিশ মশার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু রোগও ডালপালা ছড়াচ্ছে। সাধারণত আমরা জানি, বর্ষা মৌসুম তথা মে-জুন থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত মশার উপদ্রব থাকে বেশি। এসময় বিভিন্ন জলাশয়, নালা-নর্দমা, খাল-বিল, ডাস্টবিন, গাড়ির পরিত্যক্ত চাকা, বাগানের ফুলের টপে, ড্রাম, প্লাস্টিক পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিশ মশার প্রজনন হয়। এতে বিষাক্ত এ মা মশার কামড়ে মানুষের শরীরে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ ঘটে। যা মানুষকে মৃত্যুর দুয়ারে টেলে দেয়। এখন রোদ-বৃষ্টির এ মিতালিতে এডিশ মশার প্রজনন পরিবেশ যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। একদিকে করোনার তীব্র ছোবল অন্যদিকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকা মানেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। করোনার সাথে এ রোগের বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে -এসব রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। করোনার মত এ রোগ শুরু হয় জ্বর দিয়ে। বলাবাহুল্য, ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে গত বছর নিয়ন্ত্রণেই ছিল রোগটি। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ঊর্ধ্বমুখী। এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চট্টগ্রামের সংবাদপত্রে এ রোগ নিয়ে তেমন কোন প্রতিবেদন প্রকাশ না হলেও ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। তবে চট্টগ্রামে গ্রামেগঞ্জে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা শুনা যাচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গুই বলা যায়। শহরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে বলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট তথ্যে বেরিয়ে আসছে। সূত্র জানায়, ঢাকায় একদিনেই ডেঙ্গুজ্বরে নতুন আক্রান্ত ২৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরেও আক্রান্ত হয়েছেন একজন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপসর্গ থাকা সত্তে¡ও অনেকে পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন না করোনা পরিস্থিতির কারণে। ফলে অনেক রোগী থেকে যাচ্ছেন শনাক্তের বাইরে।
শুরুতেই ভরা হয়েছে, এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। ঘরে-বাইরে পানি জমলেই এই মশা ডিম পাড়ে। তাই এ রোগ থেকে বাঁচার সহজ উপায় হলো ঘরে-বাইরে কোথাও যেন পানি না জমতে না পারে তা নিশ্চিত করা। আমাদের চারপাশের পরিবেশ সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এডিস মশা বংশবিস্তারের সুযোগ পাবে না। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মশক নিধনে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় কোথাও যেন মশার লার্ভা জন্মাতে না পারে সেজন্য সবাইকে সমন্বিতভাবে মশক নিধন করতে হবে। দেশে ডেঙ্গি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। বস্তুত ২০১৫ সাল থেকে রোগটির প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে কিছুটা কমে ২০১৮ সালে আবার বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে এ রোগের প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ডেঙ্গিজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছিল শিশু, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী। কাজেই বিশেষভাবে শিশুদের সুরক্ষায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং কর্মস্থলে সবাইকে এডিস মশার বিষয়ে থাকতে হবে সচেতন। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চট্টগ্রাম ও ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতেও এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাবের পাশাপাশি জনগণের উদাসীনতার কারণেই যে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার বেড়েছে, তা বলাই বাহুল্য। কারও উপসর্গ দেখা দিলে তিনি করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কিনা তা যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করাতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানোর সামর্থ্য নেই। সেসব ক্ষেত্রে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা মনে করি, দেশের মানুষ মহামারি করোনায় পর্যুদস্ত। সরকারও ভালো নেই। করোনা মোকাবেলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় জনগণকে সচেতন হতে হবে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজেদের শুধু করোনায় মত্ত না রেখে ডেঙ্গুর মত মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ রোগ নিরাময়ের দিকেও নজর দিতে হবে।