বাড়ছে ডলারের দাম মূল্যস্ফীতির শঙ্কা দূর করতে হবে

4

 

গত কয়েকমাস ধরে দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলছে ডলারের দাম। একইসাথে বাজারে দেখা দিয়েছে ডলার সংকট। এতে কমে আসছে রেমিটেন্স প্রবাহ ও বাড়ছে আদানি পণ্যের দান। ফলে সাধারণ ভোক্তাদের দূর্ভোগের পাশাপাশি অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। গতকাল শুক্রবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত আড়াই মাসে প্রতি ডলারে এক টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। গত ৩১ জুলাইয়ে প্রতি ডলার পেতে যেখানে ব্যয় করতে হতো ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা, সেখানে অক্টোবর মাসে এসে তা হয়েছে ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সা। এবং ক্ষেত্রবিশেষে ৮৮ টাকা দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে। অথচ ২০০৬ সালে ১ ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৭০ টাকা। তবে সামনে ডলারের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে গত দুই বছরে যে হারে বিদেশ থেকে শ্রমিক ফিরে এসেছে, ওই হারে যায়নি। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের মতো রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড হবে না। দ্বিতীয়ত করোনা পরিস্থিতির কারণে আমদানি দায়সহ বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি যথাযথভাবে পরিশোধ করা হয়নি। ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বারবার সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। বৈদেশিক মুদ্রার বকেয়া কিস্তিগুলো চলতি বছরে পরিশোধের চাপ থাকবে। তৃতীয়ত যে হারে আমদানি ব্যয় বাড়ছে ওই হারে বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ হবে না। সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর ডলার সরবরাহের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সীমা থাকতে পারে। সবমিলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে একটি সঙ্কট ভাব থাকবেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের মতে, সামনে আমদানি চাপ আরো বাড়বে। এতে ডলারের মূল্যও বেড়ে যাবে। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো বকেয়া কিস্তির অর্থ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। কারণ আগে যেখানে প্রতি ডলার কিনতে ৮৪ টাকা ব্যয় করতে হতো, সেখানে এক বছর পর ৮৭ টাকা হলে প্রতি ডলারে তিন টাকা বেড়ে যাবে। এভাবে ডলারের প্রকৃত মূল্য বেড়ে যাবে। সবমিলেই সামনে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার চাপে থাকবে। তবে টাকার অবমূল্যায়ন বেশি হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। কারণ তখন হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাবে। এটাকে ইতিবাচক দিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হারে ঊর্ধ্বগতি, শ্রমবাজারে কর্মের অভাব, সর্বোপরি করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আগামীতে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্লেখ্য, দেশের হালনাগাদ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে চারটি প্রধান ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো-বৈশ্বিক খাতে প্রত্যাশার চেয়ে পুনরুদ্ধারের গতি কম; বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফিতির হারে ঊর্ধ্বগতি; শ্রমবাজারে কর্মের অভাব এবং পণ্য পরিবহণ খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যপণ্যসহ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যা গত জুলাইয়ে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ থাকলেও আগস্টে বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
আমরা মনে করি, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সর্বাগ্রে মানুষের মধ্যে আস্থা সঞ্চার করা জরুরি। দেশবাসীকে এ নিশ্চয়তা প্রদান করা উচিত যে, কোনোভাইে তাদের আয় হ্রাস পাবে না। এর ফলে মানুষ খরচ করবে ও অর্থনীতিতে ভোগ বাড়বে। এতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম গতি পাবে, যা এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে একইসঙ্গে উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের সুযোগও নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের বিনিয়োগ থেকে মুনাফা আসার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা জানি, দেশে আমদানি ও রপ্তানী বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি অক্ষুন্ন রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজার বিশেষ করে ডলারের মূল্য সব সময় গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আশার কথা, এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ ধারাবাহিকতায় সরকারও বিভিন্ন নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোকে সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।