বাহারি ইফতারি, জমজমাট বিকিকিনি

7

এম এ হোসাইন

দোকানে দোকানে বাহারি কায়দায় সাজানো ইফতারি। নানা বর্ণ আর সুগন্ধে ভরা স্বাদের রকমারিগুলো আকৃষ্ট করছে রোজাদারদের। তাই ইফতারি কিনতে দুপুরের পর থেকেই ভিড় পড়ে যায় দোকানে দোকানে। ইফতারির বাহার যেমন, তেমনি দোকানির হাঁকডাক আর শতকণ্ঠের কোলাহল। ভিড়ের মধ্যে আছেন কিশোর-যুবক থেকে ষাটোর্ধ প্রবীনরাও। বাহারি পদের ইফতারি কেনার এমন ভিড় চট্টগ্রামের বিভিন্ন দোকানে।
এসবের মধ্যে রয়েছে রেশমি জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি কাবাব, গ্রিল চিকেন, বুন্দিয়া, গরুর কালো ভুনা, কাচ্চি, মগজ ভুনা, চিংড়ি বল, পরোটা, লুচি, চিকেন তান্দুরি, চিকেন বটি কবাব, দই চিড়া, জিলাপি, ছোলা, পেঁয়াজু। এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কান রোল, অ্যারাবিয়ান কাবাব, তার্কিজ শর্মা, বাস্কেট চিকেন, চিকেন সাসলিক, চিকেন মাসরুম, হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি, দইবড়া, পেপের জুস, ঢাকাইয়া হালিম, চুমকি হালুয়া, বিফ বিরিয়ানি, ফিরনি, মাটন হালিমসহ আরও নানা পদ।
নবাবী এসব ইফতারি বেচাকেনা চলছে মধ্যবিত্তের দোকান থেকে উচ্চ বিত্তের দোকানগুলোতেও। ইফতারের আয়োজনে নবাবী এ হাওয়া লক্ষ্য করা গেছে গতকাল রমজানের প্রথম দিন। যা চলবে মাসজুড়ে।আগ্রাবাদ থেকে অফিস করে ফিরছেন জিয়াউল হক। ফেরার পথে জিইসি মোড় থেকে কিনছেন ইফতারি। তিনি বলেন, প্রথম রোজা, তাই পরিবারের সঙ্গে ইফতার করবো। ঘরে ইফতারির ব্যবস্থা আছে। বাইরের কয়েকটি আইটেম নিয়েছি। প্রথম রোজার ইফতারে যেন আলাদা একটি স্বাদ আসে। পরিবারের সবাই মিলে একসাথে ইফতার করার মজাটাই আলাদা।
তিনি বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁতে বসে ইফতার করার সুযোগ এখন নেই। সব ধরনের ইফতারির দাম অনেক বেশি। তারপরও ঘরের ইফতারির সাথে মেশানো যায় এমন কয়েকটি আইটেম বাইর থেকে কিনেছি।
ভোজন রসিক খ্যাত চট্টগ্রামবাসীর রমজানের প্রত্যাহিক ইফতারে রাজকীয় ব্যাপার থাকে। তবে রোজার প্রথমদিকে সাধারণত বাসাবাড়িতেই থাকে ইফতারের আয়োজন। রোজা বাড়ার সাথে সাথে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিড় বাড়ে। তবে এবার প্রথম রোজা থেকেই ভিড় ছিল হোটেল-রেস্তোরাঁয়। পছন্দের ইফতারি আইটেম কিনতে দীর্ঘ সারি ছিল দামি রেস্তোরাঁতে। দেশি-বিদেশি সব আইটেমরই ছিল সমান কদর। আছরের নামাজের পর পরেই অভিজাত দোকানগুলোর ইফতারি শেষ হয়ে যায়।
জিইসি মোড়ের একটি রেস্তোরাঁর কর্মচারী সাকিব বলেন, সবকিছুর দামই এখন বেশি। ভালো ইফতারি খেতে হলেও আপনাকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে। তবে অন্যান্য জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে ইফতারি আইটেমের দাম কিন্তু এতোটা বাড়েনি। গতবারের সাথে তুলনা করলে সামান্য বেড়েছে।
রমজানের প্রথম দিনে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চিল হালিমের। তাছাড়া জিলাপি, বিরিয়ানি, মেজবানির মাংস, শাম্মি কাবাব, বাটি কাবাব, চিকেন কাটলেট, স্যান্ডুইচ, পাটিশাপটা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুরচপ, দই-জিরা পানি, জুস, হালিম আখনি, ল্যাম্ব শর্মা, চিকেন শর্মা ইত্যাদির চাহিদাও ছিল বেশ। এসব আইটেমের মধ্যে ৫ টাকা করে পেঁয়াজু-বেগুনি ও আলুর চপ, ১০ টাকার সবজি বড়া, ডিম চপ ১৫ টাকা, প্রতি পিস জিলাপি ১০ টাকা, শিক কাবাব ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তাছাড়া মানভেদে হালিম প্রতিকেজি ৮০০ টাকা থেকে ১২শ টাকায়, মেজবানী মাংস ৮শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
শুধু হোটেল বা রেস্তোরাঁ নয়, অস্থায়ী ইফতারির দোকানগুলোতেও ভালই বিক্রি হয়েছে। প্রায় প্রতিটি মোড়ে অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে অনেক দোকান। যেখানে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। সাধারণত কয়েকটি ইফতারি আইটেম স্থান পেয়েছে এসব দোকানে। তবে ভালই চাহিদা রয়েছে ইফতারিগুলোও।
মুরাদপুর এলাকার ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, রমজান মাসে কয়েকটি আইটেমের ইফতারি বিক্রি করি। রোজাদারদের চাহিদা বজায় রেখে এবারও ইফতারের আয়োজন করেছি। ঘরোয়াভাবে এসব ইফতারি তৈরি করে বিক্রির জন্য আনা হয়। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যায়।