বালুচরায় ভবনে বিস্ফোরণ

27

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর বায়েজিদ থানাধীন বালুচরা এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের পর দেওয়াল ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণে দু’জন দগ্ধসহ মোট তিনজন আহত হয়েছেন। কী কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট ও গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গতকাল রবিবার বালুচরা বাজার এলাকায় কাশেম কলোনিতে একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহাম্মদ ফারুক (২৩) কাশেম কলোনির ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ বদিউল আলমের ছেলে। তাদের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার কার্বারি পাড়া এলাকায়। দগ্ধ দু’জন হলেন- মো. ফোরকান (৫৫) ও আবুল কালাম (৩০)। তাদের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। দু’জন পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। তারা কাশেম কলোনির চার নম্বর কক্ষে থাকেন। এছাড়া দেলোয়ার হোসেন (২১) নামে ওই কলোনির এক ভাড়াটিয়া দেওয়াল ধসে আহত হয়েছেন। তিনি পেশায় চা-দোকানি।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, কাশেম কলোনির নিচতলায় এক কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় ফোরকান ও কালাম ব্যাচেলর হিসেবে ভাড়ায় থাকেন। সেই কক্ষে বিস্ফোরণ হয়েছে। দু’জন দগ্ধ হয়েছেন। ঘটনার সময় ওই কক্ষের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন ফারুক। দেওয়াল ধসে পড়ে তিনি মারা গেছেন। আরও একজন সামান্য আহত হয়েছেন।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার কবির হোসেন জানান, বিস্ফোরণের পর কাশেম কলোনির কক্ষটিতে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছার আগেই স্থানীয়রা তিনজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক জানিয়েছেন, আহত ফারুককে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ফোরকান ও কালামকে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে পাশাপাশি দু’টি কক্ষ প্রায় ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে। জানালা-দরজা ভেঙে পড়ে গেছে। দু’টি দেওয়ালের মধ্যে একটি প্রায় পুরো অংশ এবং আরেকটির মাঝামাঝি প্রায় অর্ধেক অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। কক্ষের ভেতরে আসবাবপত্র তছনছ অবস্থায় আছে। যে কক্ষে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটিতে এবং পাশের সব কক্ষেই একটি করে গ্যাসের চুলা আছে, যেটি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে যুক্ত।
পাঁচতলা ভবনটির সামনের অংশের দোতলায় আছে বায়তুল মোস্তফা জামে মসজিদ। তৃতীয় তলায় আছে হাশেমিয়া-কাশেমিয়া ইসলামিক একাডেমি নামে একটি মাদরাসা। নিচতলায় ১৪টি এক কক্ষবিশিষ্ট বাসা। চতুর্থ ও পঞ্চম তলা এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার পেছনের অংশেও বাসা আছে। এছাড়া ভবনের পেছনে একই মালিকের মালিকানাধীন সেমিপাকা কলোনি আছে। ভবনের প্রবেশপথ দেখলে বোঝা যায় না ভেতরে বাসা আছে কিংবা কয়েক’শ মানুষের বসবাস।
ভবনটির মালিক মৃত হাজী আবুল কাশেমের ছেলে মো. খুবচুর আলম এখন সেটি দেখাশোনা করেন। খুবচুর জানান, ভবনের নিচতলায় ১৪টি বাসার ১২ টিতে ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া আছেন। দু’টিতে পরিবার আছে। ফোরকান ও কালাম যে কক্ষে থাকেন, সেখানে তারাসহ মোট পাঁচজন ভাড়াটিয়া। ঘটনার সময় শুধু ফোরকান ও কালাম বাসায় ছিলেন। তারা ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই বাসায় থাকেন।
ফোরকান ও কালাম যে কক্ষে থাকেন, তার পাশের কক্ষে ভাড়ায় থাকেন স্থানীয় চা-দোকানি দেলোয়ার হোসেন। বিস্ফোরণে দেওয়াল ধসে ইট-পাথরের খন্ডাংশ পড়ে তিনিও আহত হয়েছেন। দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি পাশের কক্ষে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি শব্দ হয়। এরপর চারদিকে ধোঁয়া দেখি। আমার মুখে ইটের টুকরা এসে লাগে। আমি দ্রুত বের হয়ে দেখি, কালাম ও ফোরকান আহত হয়ে পড়ে আছে। তারা রাজমিস্ত্রি। মাঝে মাঝে আমার দোকানে গিয়ে চা-নাস্তা খায়।
ঘটনাস্থল পাঁচতলা ভবনের পেছনে যে সেমিপাকা কলোনি আছে, সেখানে একটি বাসায় নিহত ফারুকের বাবা-মা থাকেন। তার বাবা বদিউল আলমের চট্টগ্রাম সেনানিবাসের গেইটে একটি পান দোকান আছে। তারা দুই ভাই, এক বোন।
ঘটনাস্থলে যাওয়া নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে গিয়েছিল। কি কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটা আমাদের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, ফায়ার সার্ভিস খতিয়ে দেখছে। তবে আমরা খালি চোখে এখানে কোনো দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক দেখিনি। আমাদের মনে হচ্ছে, রুমের ভেতরে গ্যাস জমে গিয়ে প্রেশারে বিস্ফোরণ হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেস) রওনক উল ইসলাম। সঙ্গে কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন। পরিদর্শনের পর তিনি বলেন, ভবনে আমাদের সরবরাহ লাইন আছে দেখেছি। যে কক্ষে বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানে গ্যাসের চুলা আছে, পাইপ লাইনও আছে। মালিক জানিয়েছেন, এই ভবনে ৩৩টি চুলা আছে। গ্যাস লাইনে কোনো ত্রুটি আছে কি না আমরা দেখছি। কিন্তু গ্যাস নিঃসরণের একটা গন্ধ থাকে। সেটা আমরা পাচ্ছি না। ভবনে কক্ষগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, এখানে কোনো ভেন্টিলেশন নেই। গ্যাসের চুলা চালু থাকলে এমনিতেই গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে।