চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে নির্বাচন থেকে সরাতে ‘পরিকল্পিতভাবে’ বাবুল হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কাদেরের স্ত্রী নুসরাত জাহান এসব কথা বলেন।
একইসাথে হত্যাকান্ডের বিভিন্ন অংশ নিয়ে চারটি প্রশ্ন তোলেন। প্রশ্নগুলোর উত্তর উদ্ঘাটনের পথে হাটলেই বেরিয়ে আসবে গভীর রজনৈতিক ষড়যন্ত্র। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, কাউন্সিলর নির্বাচন থেকে আমার স্বামীকে সরিয়ে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তাকে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নুসরাত জাহান আরও বলেন, মগপুকুর পাড় এলাকায় গণসংযোগ ছিল আব্দুল কাদেরের। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর গণসংযোগ করছিলেন মতিয়ার পুলে। সেখান থেকে এসে এক ঘণ্টা ধরে মোস্তফা কামাল টিপুর বাসায় অবস্থান নেন। গণসংযোগ করতে করতে আমার স্বামী টিপুর বাসার কাছাকাছি পৌঁছাতেই নজরুল ইসলাম বাহাদুর সেই বাসা থেকে বের হন। তিনি বের হতেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আর ওই সংঘর্ষে প্রাণ হারান বাবুল।
হত্যাকান্ডটি পরিকল্পিত দাবি করে তিনি বলেন, যদি আব্দুল কাদের কিংবা তার কর্মী সমর্থকরা পরিকল্পনার সাথে জড়িত থাকতো, তাহলে তারা নিশ্চয় একটা বাসায় ঢুকে গ্রেপ্তার হওয়ার অপেক্ষা করতো না। আত্মরক্ষার জন্য তাহেরা ম্যানশন নামে একটা বাসায় ঢুকে গেট লাগিয়ে দেয় আমার স্বামী ও তার কর্মী সমর্থকরা। পরে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে কোন অস্ত্র পায়নি পুলিশ। আপনারাই বলুন যেখানে কাদেরের আত্মরক্ষারই প্রস্তুতি ছিল না, সেখানে তাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী বলা হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে?
তাছাড়া তাহেরা ম্যানশনে পুলিশ যাওয়ার আগে জিয়া নামে একজনের নেতৃত্বে কয়েকজন তাহেরা ম্যানশনের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে কাদেরকে আক্রমণ করতে চায়। পরে জিয়া অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও অজানা কারণে তাকে ছেড়েও দেয় পুলিশ। কেন ও কাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের স্থান থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে ছেড়ে দিল পুলিশ?
হত্যাকান্ডের আলামত নষ্ট করতে সিসিটিভি ভাঙা হয়েছে দাবি করে কাদেরের স্ত্রী বলেন, হত্যাকান্ডের আশপাশের সিসিটিভিগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই সময় পুলিশের সামনেই বাহাদুরের কর্মী সমর্থকরা ভাঙচুর করে। অন্যদিকে ঘটনার শুরু থেকেই তাহেরা ম্যানশনে অবরুদ্ধ ছিল কাদের ও তার কর্মীরা। সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। তাহলে তাদের পক্ষেতো সিসিটিভি ভাঙা সম্ভব ছিল না। অন্যদিকে বাহাঙুরের বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থক এলাকায় সিসিটিভি ভাঙছে, এমন ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে।
অন্যদিকে বাবুল খুন হন পিছন থেকে ছোড়া গুলিতে। গণসংযোগের পেছনের অংশে টিপুর সাথে ছিলেন তিনি। সামনে ছিল বাহাদুর নিজে। আর বাহাদুরের উল্টো দিকে ছিল কাদেরের সমর্থকরা। তাহলে মিছিলের পেছনে থাকা টিপুকে গুলি করলো কে? এসময় টিপু কোথায় ছিল? কদমতলীর হারুন মার্ডার, ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কর্মী সোহেল খন্দকার, আগ্রাবাদে মারুফ চৌধুরী মিন্টূ হত্যাকান্ডে মোস্তফা কামাল টিপু প্রকাশ কসাই টিপু জড়িত ছিল তা প্রশাসন অবহিত। পরপর এতোগুলো হত্যাকান্ডে যার সংশ্লিষ্টতা, বাবুল হত্যাকান্ডের আগ মুহুর্তে তার বাসায় কি করছিলেন বাহাদুর?
হয়রানি নয় সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্বাস হত্যাকান্ড নয় বরং নির্বাচন করাই আমার স্বামীর অপরাধ। সেই অপরাধেই তাকে জেলে যেতে হয়েছে। যে নির্বাচন করার অপরাধে আমার স্বামী, পরিবার ও তার কর্মী সমর্থকদের এমন চরম ম‚ল্য দিতে হয়েছে, আমার স্বামীর হয়ে সে নির্বাচনী লড়াই এগিয়ে নিতে চাই আমি। পাশাপাশি এ ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা থেকে আব্দুল কাদেরসহ তার কর্মী-সমর্থকদের মুক্তি চাই।
উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি রাতে নগরের পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মোগলটুলী এলাকায় আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজগর আলী বাবুল। এ ঘটনায় ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুুল কাদেরসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাবুল ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।