বাবার সম্পদের জন্য মাকে খুন

97

পটিয়া প্রতিনিধি

পটিয়ায় পিতার মৃত্যুর ৩৩ দিনের মাথায় নিজের মা’কে গুলি করে হত্যা করেছে সন্তান। বাবার জমানো টাকা হাতে তুলে না দেয়ায় মাদকাসক্ত মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাইনু (৩২) তার মা জেসমিন আকতার (৫২) কে মাথায় গুলি করে এমন নজীর সৃষ্টি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় গুলির শব্দ শুনে আশেপাশের মানুষ এসে গুলিবিদ্ধ জেসমিন আক্তারকে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত জেসমিন আক্তার জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির আহব্বায়ক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান সামশুল আলম মাস্টারের স্ত্রী। খুনি মাইনু তাদের বড় সন্তান। তাদের ছোট সন্তান মাশফীকুর আলম মাশফী অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন।
সামশু মাস্টার গত ১৩ জুলাই বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ৩৩ দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। জানা গেছে, এই মঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় একটি মামলাসহ অন্তত ৬টি মামলা চলমান রয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ মাইনুলের ঘর থেকে একটি তাজা কার্তুজ, একটি এয়ারগান, ঘটনাস্থল মায়ের কক্ষ থেকে অব্যবহৃত একটি তাজা ৬৫ বোরের পিস্তলের গুলি ও ব্যবহৃত একই বোরের একটি গুলির ব্যবহৃত অংশ উদ্ধার করে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা কাপড়সহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। ঘটনার পর ঘরের পেছন দিয়ে পালিয়ে যায় খুনি পুত্র। শামসুল আলম মাস্টারের দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছেন। তাদের মধ্যে মঈনুদ্দিন সবার বড়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর বাবার রেখে যাওয়া টাকার জন্য মা ও অস্ট্রেলিয়া ফেরত বোনের সাথে বিরোধ বাঁধে মঈনুদ্দিনের। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বোন শায়লা শারমিন দেশে আসেন এবং কয়েক দিনের মধ্যে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার কথা ছিলো। সামশু মাস্টারের মৃত্যুর পর প্রায়ই বোন ও মায়ের নামে নমিনি করে বাবার রেখে যাওয়া টাকার জন্য ঝামেলা করতো মাইনু। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় নমিনি করা টাকার জন্য ঝামেরার এক পর্যায়ে মায়ের মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে মঈনুদ্দিন। বোন পাশের রুমে দরজা বন্ধ করে আত্মরক্ষা করেন।
স্থানীয়রা জানান, মা ও মেয়ে গতকাল সকাল থেকে কয়েকটি ব্যাংকে নমিনির কাগজপত্র ঠিক করার জন্য আবেদনসহ নানা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করেন। দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দুপুরের রান্নাসহ নানা গৃহস্থালি কাজ শুরু করেন। এ সময় মা ও বোন তাকে না জানিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার বিষয়টি মঈনুদ্দিন জানতে পেরে বিবাদে লিপ্ত হয়। ওই সময় মইনুদ্দিন মা ও বোনকে গুলি করার জন্য তেড়ে গেলে বোন পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আত্মরক্ষা করে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু মায়ের শেষ রক্ষা হয়নি। তার মায়ের কক্ষে ঢুকে মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায় মইনুল। পরে বোন ও প্রতিবেশী ভাবী ডেইজি আক্তারসহ লোকজন গিয়ে মা জেসমিন আক্তারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়।
মাদকাসক্ত পুত্র মঈনুদ্দিন মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বাবার মৃত্যুর আগে বাড়িতে আসা-যাওয়া তেমন না থাকলেও বাবার মৃত্যুর পর নিয়মিত বাড়িতে আসতেন এবং রেখে যাওয়া নগদ টাকার জন্য মা ও অস্ট্রেলিয়াফেরত বোনের সাথে বিবাদে জড়াতেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরে দুপুরের জন্য রান্না করার জন্য চুলায় বসানো অর্ধ সিদ্ধ ভাত পড়ে আছে। প্রতিবেশী ডেইজি আক্তার জানান, গুলির শব্দ আর মইনুলের বোনের কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে আমি ঘরে গিয়ে দেখি মা জেসমিন আক্তার খাটের উপর ছটফট করছেন। এ সময় অন্য কক্ষ থেকে ছোট বোন ও প্রতিবেশীদের ডেকে নিয়ে হাসপাতালে প্রেরণ করি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদকাসক্ত মইনুল বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। অস্ত্র বিক্রির পাশাপাশি মাদকাসক্তও। বাবার মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে নিজ পছন্দে সকলের অগোচরে নগরীতে বিয়ে করেন। কিন্তু সামাজিক অনুষ্ঠান এখনো সম্পন্ন হয়নি। বিয়ের কথা জানার এক সপ্তাহের মধ্যে বাবার মৃত্যু হয়। এরপর মইনুল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
এদিকে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলার এসপি রশিদুল হক। তবে তিনি ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।
পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম জানান, মইনুলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।