বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা কখনো ফুরোয় না

723

ছোটবেলায় বাবার কাঁধে চড়ে ঘোরার অভ্যাস হয়নি এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাবার হাত ধরে এখানে ওখানে ছুটে যাওয়ার শৈশবের দিনগুলো কার না মনে থাকে? বাবা মনেই আদর, বাবা মানেই শাসন-বারণ, বাবা মানেই ভালোবাসার এক অন্যরকম সুখ, বাবা মানেই এক টুকরো হাসি খুশি মুখ। ছোট্ট বন্ধুরা বছর ঘুরে আবারো আমাদের সামনে বাবা দিবস এসেছে। বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস পালন করা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে খুব গুরুত্ব দিয়ে দিবসটি পালন করা শুরু হয়েছে। বিশ্ব বাবা দিবসের ধারণাটি ১৯০৭ সালে ভার্জিনিয়ার ক্লেটনের মাথায় আসে। ওই বছর ডিসেম্বরে ভার্জিনিয়ার মোনোংয়াতে ভয়াবহ এক খনি বিস্ফোরণে প্রায় এক হাজার শিশুর বাবা প্রাণ হারায়। এসব শিশুর বাবা হারানোর বেদনায় খুব পীড়া দেয় পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টবাসী ক্লেটনকেও।
প্রথমে ক্লেটন চেয়েছিলো তার বাবার মৃত্যু দিবস অনুসারে খনিতে নিহত বাবাদের স্মরণ করে ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই থেকে বিশ^ বাবা দিবস পালিত হোক। এরপরও নানা কারণে বাবা দিবস পালিত হতো না। ১৯০৯ সালের দিকে ওয়াশিংটনবাসী সোনোরা স্মাট নামের এক নারী বিশ^ বাবা দিবস তার বাবার জন্মদিন ৫জুন পালন করার ব্যাপারে অনুমতি চান। তাতেও সময় পেতে বিলম্ব ঘটে। পরে ধর্মীয় নেতার অনুমতিক্রমে ১৯ জুন প্রথমবারের মতো দিবসটি পালন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন করার বিল তুলে ধরা হয়। ১৯১৬ সালে সে সময়ের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন কর্তৃক বিলটি অনুমোদিত হয়।
১৯২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ তম প্রেসিডেন্ট কেলভিন ক্যুলিজ বাবা দিবসকে মর্যাদা জাতীয় দিবসের মর্যাদা দেন। পুনরায় ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস বলে ঘোষণা করেন। সেই সময় থেকেই বিশ্বের সব বাবাদের সম্মানে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। সেই থেকে বিশে^র নানা দেশে জুনের তৃতীয় রোববার বিশ^ বাবা দিবস পালনের রেওয়াজ চালু হয়। এর বাইরেও কিছু দেশ ভিন্ন মাসের কয়েকটি ভিন্ন তারিখে বাবা দিবস পালন করে। কিন্তু পৃথিবীর একটি বড় অংশ যেমন- বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চিলি, কলাম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়েসহ আরও কিছু দেশে জুনের তৃতীয় রোববার বাবার জন্য পালন করা হচ্ছে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে।
ছোট্টবন্ধুরা, বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা কখনো ফুরোবার নয়। পৃথিবীতে মায়ের মতো বাবাকে ভালোবেসে দিবসটির প্রচলন হয়েছে। বাবা হলো সন্তানের জন্য একজন ভালোবন্ধু ও পথ প্রদর্শক। এদিনটাতে চাইলে তোমরা বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাতে পারো।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাবা দিবসে কার্ড দেয়ার প্রচলন আছে আজো। তোমরা চাইলে শুভেচ্ছা উপহার দিতে পারো বাবাকে। যাদের বাবা বেঁচে নেই তারা বাবার জন্য দোয়া চাইতে পারো যার যার সৃষ্টিকর্তার কাছে। বাবার সাথে প্রত্যেকটা সন্তানের গভীর একটা সম্পর্কের কারণে আমরা সবাই বাবাকে অনেক সম্মান ও গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করি। বাবা দু’অক্ষরের ছোট্ট শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে গভীর ভালোবাসা ও নিরাপদ মমতা ও নির্ভরতার এক বন্ধন। বাবা আমাদের সংসারে একজন স্নেহময় পুরুষ হিসেবে নিয়ত দুঃখ-কষ্ট ঘুচিয়ে দেন সহজেই। বাবা হলো সন্তানদের আমাদের আস্থা ও চিরন্তন ভালোবাসা-স্নেহ মমতার প্রতীক। বিভিন্ন ধর্মে মায়ের পাশাপাশি বাবাকে সম্মান জানানোর কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। আলোকময় সৌন্দর্যের পৃথিবীতে বাবা আমাদের জীবনে আলো ছড়িয়ে দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন না।
আমাদের সুখ-দুঃখ যন্ত্রণা ও সুন্দর-সুশিক্ষিত হয়ে বেড়ে ওঠার জন্য বাবা দিনরাত পরিশ্রম করে নিস্তার পান না। বাবা ও মায়ের মতো শুধু সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর চিন্তায় অস্থির থাকেন। সবমিলিয়ে বাবার মায়ের যেমন তুলনা হয় না ঠিক তেমনি বাবারও বিকল্প নেই। ছোট্টবন্ধুরা, বিশ্ব বাবা দিবসে আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত বাবার প্রতি কোন অবহেলা নয়, বাবার স্নেহ ভালোবাসার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে সবসময়ই।
বাবাকে সম্মান জানিয়ে বাংলা ভাষাভাষী সবার জন্য অনেক গান বিখ্যাত গান রচিত হয়েছে। বিশ^ বাবা দিবসে গানগুলো আমরা শুনতে পারি হৃদয়ের আবেগ দিয়ে। বাবার মর্যাদাকে পূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে পারি। ১৯৭৯ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী মজুদমদারের গাওয়া আয় খুকু আয়, ১৯৮১ সালে শামীমা ইয়াসমীন দীবার কণ্ঠে গাওয়া ‘বাবা বলে গেল আর কোনদিন গান করো না’, এন্ডু কিশোরের কন্ঠে১৯৮৪ সালে নয়নের আলো ছবিতে গীত ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, কণ্ঠশিল্পী আগুনের কণ্ঠে গাওয়া ‘বাবা বলে ছেলে নাম করবে’ নব্বই দশকে জেমসের গাওয়া বাবা কতোদিন দেখিনা তোমায়, আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে গাওয়া বাবা তোমার কথা মনে পড়ে শীর্ষক গানগুলো বিশ^ বাবা দিবসের তাৎপর্যকে আরো অনাবিল সুখ ও সৌন্দর্যে ভরিয়ে দিতে পারে।
এছাড়া বাংলা ভাষার বাইরে এলভিস প্রেসলির কণ্ঠে ‘ডোন্ট ক্রাই ডেডি’, গ্রিন ডে’র ‘ওয়েক মি আপ’, ম্যাডোনার ‘পাপা, ডোন্ট প্রিচ’ ও ‘ওহ ফাদার’, দ্য গেইমের ‘লাইক ফাদার লাইক সন’ গানগুলো ও বেশ আকর্ষণীয়। গানে সুরে শ্রদ্ধা ও আনন্দময়তায় সবার মাঝে বিশ্ব বাবা দিবস-২০১৯ সবার মাঝে সাড়া জাগিয়ে দিক শুভ কামনাই করি।