বান্দরবানে পাহাড়ে গেলে যে খাবার সবাই খায়

33

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

বান্দরবান পাহাড়ের স্নেহছায়ায় গড়ে ওঠা এক জনপদ। সম্প্রীতি এ জেলার অহংকার। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অফুরন্ত ভান্ডার বান্দরবান। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য ও এখানকার জাতিগোষ্ঠীদের অকৃত্রিম জীবনাচরণ যে কারও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। তাই তো এ জেলার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। পার্বত্য বান্দরবানের বহুল প্রচলিত খাবার মুন্ডি। এটি মারমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। তবে শুধু এ এলাকার মানুষই নয়, এখানে আসা পর্যটকদের খাবারের মূল আকর্ষণও মুন্ডি। এ খাবারের রয়েছে অন্য রকম স্বাদ। বান্দরবান গেলে কেউ এ খাবারের স্বাদ নিতে ভুল করেন না। যারা পাহাড়ে ঘুরতে যান বা পাহাড়ি খাবার খেতে পছন্দ করেন, তারা সবাই বিশেষ ধরনের এই নুডলসের সঙ্গে পরিচিত।
জানা যায়, মুন্ডি তৈরি করা হয়, প্রথমে আতপ চাল দুই থেকে তিন দিন ভিজিয়ে রাখা হয়। ভেজা চাল ছোট ছিদ্রযুক্ত চালুনির ওপর রেখে পানি ঝরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ঢেঁকিতে দিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। সেই মন্ড বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে চাপ দিয়ে নুডলসের মতো চিকন মুন্ডি তৈরি করা হয়।
তারপর মুন্ডি প্রথমে সেদ্ধ করে নেওয়া হয়। বাটিতে সেদ্ধ মুন্ডি ঢেলে এর ওপর দেওয়া হয় লবণ, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া। এর ওপর দেওয়া হয় গরম চিকেন স্টক ও তেঁতুলের টক। তারপর ধনেপাতা দিয়ে পরিবেশন করা হয় গরম গরম মুন্ডি। বান্দরবানে ঘুরতে আসা পর্যটক রাফিয়া বলেন, এখানে মুন্ডি খেয়েছি। এটির স্বাদ একটু আলাদা। অনেকটা নুডলসের মতো। আগে ভাবতাম কীভাবে খায় এই মুন্ডি? এখন দেখছি আসলেই খুব টেস্ট। স্থানীয় ও পর্যটকদের মন কেড়ে নেওয়া প্রতি বাটি মুন্ডি পাওয়া যায় সাধারণত ২০ টাকায়। দামে কম মানেও ভালো এই মুন্ডি। বান্দরবানের কালাঘাটা, বালাঘাটা, মধ্যমপাড়া, উজানিপাড়ায় গেলেই পাওয়া যাবে মুন্ডি হাউস। বিকেলের পর থেকেই এই দোকানগুলোয় ভিড় করেন স্থানীয় ও পর্যটকরা। পরিবার নিয়ে মুন্ডি খেতে আসা লিমু মারমা জানান, এটা খুব জনপ্রিয় খাবার। এতে কোনো রাসায়নিক উপাদান নেই। আবার দামেও সস্তা। তিনি আরও জানান, তিনভাবে মুন্ডি পরিবেশন করা হয়। ঝোল, চাটনি ও ভাজি। তবে ঝোলটাই মানুষ বেশি পছন্দ করে। স্থানীয় নুচিং থোয়াই মারমা বলেন, আমরা ছোট থেকেই মুন্ডি খেতে অভ্যস্ত। এখন নিজেই এগুলো রান্না করতে পারি। তারপর বেশির ভাগ দোকানে খাওয়া হয়। মুন্ডির স্বাদটাই অন্য রকম। বংডং মুন্ডি হাউস মালিক শৈপাইং বলেন, মুন্ডি খাবারের অনেক চাহিদা রয়েছে। শীতকালে মুন্ডির চাহিদা অনেক বেশি থাকে। গরম গরম পরিবেশন করা এই খাবার তখন মানুষ অনেক খায়। দিন দিন পর্যটকদের কাছে মুন্ডির চাহিদা বাড়ছে। পর্যটকরা যাতে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন, তাই প্যাকেট করেও কিছু রাখা হয়।