বান্দরবানে পর্যটনশিল্প হুমকির মুখে

29

করোনার প্রভাবে টানা বন্ধের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বান্দরবানে পর্যটনশিল্প। লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলার পর্যটনখাত। এ ক্ষতি পুষিয়ে আগামী দিনে নতুনভাবে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের কাছে প্রণোদনার আবেদন জানিয়েছে জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, বান্দরবান জেলায় ৬০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে আর পর্যটকবাহী যান রয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক আর এই পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ। গত ১৮ মার্চ থেকে বান্দরবানের সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় বান্দরবানের জেলা প্রশাসন। আর এই লকডাউনের কারণে জেলার পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেল আর পর্যটকবাহী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ বন্ধের কারণে পর্যটন শিল্প নিয়ে যাদের রোজগার ছিলো তাদের সংসারে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। বান্দরবানে পর্যটকবাহী গাড়ির চালক কামাল জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা গাড়ি চালাতে পারছি না। তাই আমাদের আয় নেই। আমরা অনেক কষ্টে দিনযাপন করে যাচ্ছি।
বান্দরবানে পর্যটকবাহী গাড়ির চালক বাপ্পী বড়ুয়া বলেন, পর্যটন জেলা বান্দরবানে আমরা পর্যটকদের নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করি। পর্যটক আসলে আমরা তাদের গাড়ি করে বিভিন্ন স্পটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সময় ব্যয় করি। ওই আয় দিয়ে আমরা জীবনযাপন করি। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে করোনার কারণে আমাদের আয় নেই আমরা অসহায় হয়ে জীবনযাপন করছি। বান্দরবান মাইক্রোবাস জিপ কার শ্রমিক ইউনিয়নের আহব্বায়ক আলমগীর বলেন, করোনায় আমাদের প্রায় ৪০০ পর্যটকবাহী গাড়ি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই করোনা সংকটে বান্দরবানের কিছু সংগঠন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামান্য পরিমাণ ত্রাণ পেয়েছি যা দিয়ে এই দুঃসময়ে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
এদিকে লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে প্রণোদনার আবেদন জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল হিলভিউ-এর জিএম সুলতান নাফিজ বাংলানিউজকে বলেন, করোনায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিমাসে আমাদের হোটেল ব্যয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। কিন্তু লকডাউনের কারণে পর্যটক না আসায় আমরা এই ক্ষতি কিভাবে মেটাবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন, করোনার প্রভাবে বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন শিল্প। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু সব বন্ধ থাকায় সবাই বেকার। আয় রোজগার বন্ধ থাকায় তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবানের অধিকাংশ ব্যবসায়ী পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হোটেল-মোটেল নির্মাণ এবং উন্নয়নে কাজ করলেও এমন স্থবির পরিস্থিতির কারণে অনেকের এখন লোকসান গুনছে। তাই সরকারিভাবে বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক ও সংশ্লিষ্টদের জরুরিভাবে প্রণোদনা দিলেএই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমি মনে করি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে বিভিন্ন রকমের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। আগামীতেও এই সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং আগামীতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দিলে আমরা তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। খবর বাংলানিউজের