বান্দরবানে থমকে গেছে পর্যটন শিল্প

13

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

বান্দরবানে পর্যটকের নিষেধাজ্ঞা আরোপে থমকে গেছে পর্যটন শিল্প। প্রভাব পড়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন, রেস্টুরেন্টসহ প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষদেরও। নিষেধাজ্ঞা আরোপে পর্যটন খাতে দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে কোটি টাকার বেশী। আর পর্যটন মৌসুমের শুরুতে এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে পর্যটন খাতে ধস নামার আশঙ্কা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও আলীকদম উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। যেখানে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ছুটে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দর্শনে। আর পর্যটকদের সেবায় বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও রয়েছে কয়েক শতাধিক চাঁদের গাড়ি। শুধু তাই নয় দুর্গম এলাকায় যাতায়তের জন্য নৌকা, বোট, টুরিস্ট গাইড, পরিবহন শ্রমিকসহ ২০ থেকে ২৫ হাজারেরও বেশী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত পর্যটন সংশ্লিষ্ট জীবিকার সাথে। নিরাপত্তাজনিত কারণে এ চার উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে বান্দরবান। এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে।
কর্মহীন হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, টুরিস্ট গাইড, পরিবহন শ্রমিকসহ কয়েক হাজার মানুষ।
বান্দরবান ট্যুর গাইড সমিতির সভাপতি বিশ^জিৎ দাশ বাপ্পা বলেন, আমরা দেড় শতাধিক যুবক ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করে আসছি। রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও আলীকদম উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে কোন পর্যটকই বান্দরবানে আসছে না। যার ফলে স্থানীয় ট্যুর গাইডরা বর্তমানে বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এদিকে বান্দরবান শহরের আরণ্য হোটেলের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, বিগত দুই বছর করোনাকালীন আমরা ব্যবসা করতে পারি নাই। তার মধ্যে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পাহাড়ে পর্যটক নেই বললেই চলে। এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকলে হোটেল ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকে বান্দরবানে পর্যটক নেই বললেই চলে। যার ফলে বান্দরবান পর্যটন শিল্পে প্রতিদিন কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হচ্ছে। শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
তিনি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেন, রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও আলীকদম ছাড়াও বান্দরবানের আরো অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে। সেসব পর্যটন স্পটে কোন রকম ভয়ভীতি ছাড়া আপনারা ঘুরতে পারবেন। তাই শহরের অন্যান্য যেসব পর্যটন স্পট রয়েছে সেগুলোতে ঘুরতে আসার জন্য পর্যটকদের আহŸান জানান তিনি।
তবে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রæত বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্গম পাহাড়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শহরের অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে নির্ভয়ে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াতে পারবেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত ১৮ অক্টোবর থেকে পাহাড়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের কারণে রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও আলীকদম উপজেলায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রশাসন।