বান্দরবানে গুলিতে আ.লীগ নেতা খুন

46

বান্দরবানে আবারও আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের সভাপতি মং মং থোয়াই মারমাকে (৫০) গুলি করে হত্যা করা হয়।
দুপুরে রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে বান্দরবানে ফেরার পথে ভাঙ্গামুড়া পাহাড় এলাকায় তারাছা পাড়ার রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আওয়ামী লীগ নেতা রোয়াংছড়ি উপজেলার বাসিন্দা এবং তারাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় যোগ দিতে মং মং থোয়াই সোমবার সকালে রোয়াংছড়ি যায়। দুপুরে সভা শেষ করে নিজ মোটর সাইকেল নিয়ে বান্দরবান আসার পথে ভাঙ্গামুড়া পাহাড় এলাকায় তারাছা পাড়ার রাস্তার মোড়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। পরে স্থানীয়রা তার মরদেহটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুটি কার্তুজ, গুলির খোসা ও একটি এসএমজি গুলি উদ্ধার করে।
কিন্তু কে বা কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশ এখনো কিছু জানতে পারেনি। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ৫টি গুলির চিহ্ন রয়েছে।
জানা যায়, নিহত আওয়ামী লীগ নেতা মং মং থোয়াই এর সাথে জেএসএস’র সন্ত্রাসীদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তার কারণে সন্ত্রাসীরা তারাছা এলাকায় চাঁদাবাজি করতে পারত না। এ কারণে তাকে অনেকবার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে সে ৩ বছর ধরে নিজ এলাকা ছেড়ে বান্দরবান শহরে পরিবার নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকত।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ জেএসএস এর সন্ত্রাসী গ্রæপকে দায়ী করে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, পাহাড়ের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার লক্ষে জেএসএস সন্ত্রাসীরা একের পর এক গুম, খুন ও হত্যা করে যাচ্ছে। তারা এর আগেও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করেছে। আমি আগেও বলেছি সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার জন্য একটি তালিকা করেছে এবং বেছে বেছে তারা একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করে যাচ্ছে। আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় আছি। যে কোন সময় আমাদের উপরও হামলা হতে পারে।
এদিকে পার্বত্য মন্ত্রী সরকারি সফরে জেলার লামা উপজেলায় বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কাজে উদ্ধোধন করতে সোমবার সকাল ৮টা জেলা সদর থেকে লামা উপজেলা সফরে আসেন। এঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বান্দরবান হাসপাতালে যান। এসময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা মং মং থোয়াই মার্মার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। কে বা কারা হত্যাকাÐটি ঘটিয়েছে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে পূর্ব শত্রæতার জেরে এ ঘটনাটি হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মে কুহালং ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে গুলি হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে ২২ মে বান্দরবান পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক পৌর কমিশনার চ থোয়াই মং মার্মাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এর দুইদিন পর তার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঐ ঘটনার মামলায় জেএসএস এর শীর্ষ নেতা কে এস মংসহ ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে।