বান্দরবানের যৌথখামার ও রেইচা এলাকায় পানি সংকট

16

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

তীব্র পানির সংকটে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছে বান্দরবানের ৩নং সদর ইউনিয়নের রেইচা এলাকা ও পৌর এলাকার যৌথখামারের মানুষ। র্দীঘদিনের এই সমস্যা নিরসনে নেয়নি কেউ কোন স্থায়ী উদ্যোগ, আর তাই বিশুদ্ধ পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে জীবনযাপনসহ চাষাবাদ ব্যবস্থা। বান্দরবানের সদর উপজেলার ৩নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত রেইচা এলাকায় বর্তমানে ৮শ ২৫ পরিবারে বসবাস করছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সৃষ্টিলগ্ন থেকে এই পাড়ায় রয়েছে তীব্র পানির সমস্যা। পাহাড়ী এলাকায় ওয়াসার পানির কোন লাইন না থাকায় ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে চলে তাদের জীবন। আর গ্রীষ্মকাল আসলেই পানির কষ্টের পরিমাণ বেড়ে যায় আরো কয়েকগুন। অন্যদিকে পৌর এলাকার যৌথখামার এলাকা কোন গভীর নলকূপও নেই আর এতে বিশুদ্ধ পানির জন্য চরম কষ্টে দিনযাপন করছে সাধারণ মানুষ। রেইচা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. জলিল বলেন, আমাদের এলাকায় বিশুদ্ধ পানির কোন সুব্যবস্থা নেই। পাশের ঝিরি থেকে পাড়ার মানুষ পানি সংগ্রহ করে তাদের জীবনযাত্রা পরিচালনা করে। তিনি আরো বলেন, গ্রীষ্মকাল আসলে ঝিড়িতে পানি আরো কমে যায় আর এতে পানির কষ্ট বেড়ে যায় দ্বিগুণ। রেইচা ৫নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা মংনুপ্রæ মারমা বলেন, পৌরসভার এলাকার কিছু দূরত্বে আমাদের রেইচা এলাকা, তবে সৃষ্টিলগ্ন থেকে এখানে কোন পানির লাইন আসেনি। বিশুদ্ধ পানির অভাবে আমাদের ঝিরি আর নদীর পানি দিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়। পানির কষ্টে শুধু জীবনধারণ করাই কষ্ট হচ্ছে না সাথে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ ব্যবস্থা। পানির অভাবে বিভিন্ন ফলফলাদি ও শাকসবজি উৎপাদনে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। থলিপাড়া, রেইচা বাজার, তমবুসে পাড়া, রেইচা ঘোনাপাড়া, সাতকমল পাড়া, লম্বাঘোনা পাড়া, জিনিইঅং পাড়া, রতœপুর পাড়া, ঘুংকিয়ং পাড়া, ডলুঝিড়ি পাড়া, গোয়ালিয়া খোলা দক্ষিন পাড়া ও রোয়াজা পাড়ার মানুষ এখন পানির কষ্টে ফসল উৎপাদনে হারাচ্ছে আগ্রহ। যৌথ খামার এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, পৌর এলাকায় যৌথ খামার পড়লেও সেখানে বিশুদ্ধ পানির কোন ব্যবস্থা নেই। যদি সেখানে কয়েকটি ঝিড়িতে বাঁধ দিয়ে লেক তৈরী করলেও মানুষ পানির সংকট থেকে বেঁচে যেত। স্থানীয় বাসিন্দা হ্লাথুচিং মারমা বলেন, পানির অভাব কিছুটা পূরণ করার জন্য প্রতিবছর গ্রীষ্ম মৌসুমে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেঘলা জেলা পরিষদের লেক থেকে পাইপ টেনে আমাদের পাড়ায় কয়েকদিন পানি সরবরাহ করে আর তা দিয়ে গ্রীষ্ম মৌসুমে কিছুটা চাষাবাদ করা যায়। পাইপ লাইনের মাধ্যমে এই এলাকায় পানি সরবরাহের কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, তাই ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অনেকে গভীর নলকুপ ও রিংওয়েল বসালেও শুস্ক মৌসুমে সেখানে ও দেখা নেই পানির। এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ঝিড়ির পানি দিয়েই চলে এলাকার মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপন, তবে পাড়াবাসীর এমন পানির কষ্টের কথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে জানায় এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান। বান্দরবানের ৩নং সদর ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান অংসাহ্লা মারমা বলেন, রেইচা এলাকার পানির সমস্যা নিয়ে আমি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি, আশা করি তিনি এর একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই ব্যাপারে পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর জানান, ওই এলাকার গভীর নলকুপ হয়না আর যেগুলো হয়েছে বেশিরভাগই গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি থাকে না আর এতে ওই এলাকায় মানুষের বিশুদ্ধ পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, রেইচা এলাকায় বিশুদ্ধ পানির খুবই কষ্ট, নদী আর ঝিড়ি থেকে কষ্ট করে তারা পানি সংগ্রহ করে, আর তাদের পানি সমস্যা সমাধানে আমরা নদীর পানি পরিশোধন করে একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান তৈরি করে ওই এলাকায় পানির সমস্যা সমাধানে একটি প্রকল্প গ্রহণের জন্য সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করেছি।