বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ান

15

মুশফিক হোসাইন

বর্ষার আগমণের শুরু থেকেই দেশে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘা। প্রতিবেশি দেশ ভারতের আসাম, মেঘালয়, চেরাপুঞ্জিতে স্মরণাতীতকালের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত। ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে বিগত ১৩০বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলের ঢাল হচ্ছে বাংলদেশের সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলা। উজানে সীমাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং দেশের উপরে বর্ণিত এলাকাসমূহে লাগাতার বৃষ্টিপাতে স্মরণাতিকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও ভয়াবহ বন্যায় দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। ঐ সকল জেলা ও সন্নিহিত অঞ্চলে বিদ্যুৎ নাই, বাসস্থান নাই, খাবার পানি ও শুকনো খাদ্যেও চরম অভাব দেখা দিয়েছে। মানুষের ঘরে ঘরে পানি। রান্না-বান্নার সুযোগ নাই। হাতের কাছে সুপেয় পানি নাই বললেই চলে। এ এক মহাবিপর্যয়। সরকার সেনাবাহিনী প্রেরণ করে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রশ্ন হলো এতো বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হল, তাকে সামাল দেওয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
বিগত ১২২ বছরের ইতিহাসে বন্যায় প্লাবিত ঘটনা নজীরবিহীন। বলা যায়, গত এক মাসে দুইবার প্লাবিত হলো বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল। বিশেষজ্ঞ মহলা ধারণা করছে যে, ইটনা-কিশোরগঞ্জ হয়ে নেত্রকোনা জুড়ে হাওরের উপর দিয়ে যে মহাসড়ক হয়েছে এবং বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন মহাসড়ক নির্মাণে ঢল ও বন্যার পানি নির্গমনের যথাযথ পথ রাখা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে হাওর ও বিলের পানি ভাটিতে সহজে নামতে না পারায় এই জলাবদ্ধতা। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে মহাসড়কের জলাবদ্ধ এলাকায় রাস্তা কেটে পানি নামার সুযোগ করে দেওয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান। এ থেকেই বোঝা যায় অপরিকল্পিত সড়ক ও মহাসড়কসমূহ এই জলাবদ্ধতা ও বন্যার অন্যতম কারণ। আমাদের ভাবতে হবে ভাটির দেশ হিসাবে আমাদের সড়ক ও জনপথসমূহ কেমন হতে হবে এবং জনবান্ধব হবে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন, এমন ভাটি অঞ্চলে সড়ক ও মহাসড়ক নয়Ñসেখানে হবে এলিভেটেট এক্সপ্রেস ওয়ে। আমার মতে, আমাদের এখন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে মহাসড়ক নির্মাণ না করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে গেলে বাস্তবিক অর্থে আমাদের বন্যা, ঢল ও অতিবৃষ্টির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাব। সিলেটে আমার অনেক বন্ধ ও শুভাকাক্সক্ষী আছে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় যে, ধনী গরীব সকলের অবস্থা ভয়াবহ। বিদ্যুৎবিহীন হওয়ায় তা এক ভুতরে নগরীতে পরিণত হয়েছে। সুপেয় পানীয় জলের তীব্র সংকট। শুকনা খাবারের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। চারিদিকে পানি আর পানি। ভাষাহীন ও অবর্ণনীয় এই দুর্যোগে আসুন সরকারের পাশাপাশি সমগ্র দেশবাসী প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে বানভাসী মানুষের পাশে যার যার সামর্থ্য অনুুযায়ী সাহায্যেও হাত বাড়িয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে মানুষ মানুষের জন্য। এই মহাদুর্যোগকালীন সময়ে দলমত নির্বিশেষে হতভাঘ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানাচ্ছি।
আসুন, মহান করুণাময় আল্লাহ (সু-তা)’র কাছে দুইহাত তুলে নাজাত কামনা করি। হে মহান আল্লাহ, তুমি শাহজালাল ও ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমির দুর্গত মানুষকে রক্ষা করুন। পুনশঃ আবদন অসহায় ও দুর্গত বানভাসী মানুষের জন্য এগিয়ে আসুন। ভুলবেন না এ ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন আমিও হতে পারি।

লেখক : কবি, নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব)