অবশেষে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য পদ থেকে বাদ পড়লেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলাইমান আলম শেঠ। সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বোর্ড সদস্য পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। একইসাথে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহক প্রতিনিধির নাম প্রস্তাব করার জন্য ওয়াসা চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেশ কিছুদিন থেকে দাবি উঠেছিল ভোক্তাদের সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর একজন প্রতিনিধিকে ওয়াসার গ্রাহক প্রতিনিধি করার। এ দাবি এখন আরও জোরালো হলো।
চার বছর আগেই শেষ হয়ে যায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি ব্যবহারকারীদের প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ পাওয়া সোলায়মান আলম শেঠের মেয়াদ। মেয়াদ শেষ হলেও তিনি দায়িত্ব। ছাড়েননি নিয়মিত নিয়েছেন ওয়াসা থেকে যাবতীয় সুযোগ সুবিধাও।
অন্যদিকে গ্রাহকদের প্রতিনিধিত্ব করার কথা থাকলেও একের পর এক গ্রাহক স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়েছেন তিনি। ওয়াসার বোর্ড সভায় তিনি গ্রাহকদের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। অবশেষে অবৈধভাবে পদ দখল করে থাকা সোলায়মান আলম শেঠকে বাদ দিল মন্ত্রণালয়। একইসাথে ওই পদে পানি ব্যবহারকারীদের নতুন একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন দিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
গত ২৯ জুলাই এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পানি ব্যবহারকারীগণের প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের সদস্য জনাব মো. সোলায়মান আলম শেঠ এর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬ এর ৬(১*গ) ও ৬(২) ধারা অনুযায়ী উক্ত পদে নিয়োগের লক্ষ্যে আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে পানি ব্যবহারীগণের একজন প্রতিনিধির নাম প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, আমি কয়েকদিন দেশের বাইরে ছিলাম। আজ (বুধবার) দেশে এসেছি। কোনো চিঠি এখনো হাতে পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
গত ২৫ মার্চ দৈনিক পূর্বদেশে ‘বৈধ গ্রাহক প্রতিনিধি নেই চট্টগ্রাম ওয়াসায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে চার বছর ধরে অবৈধভাবে সোলায়মান আলম শেঠের প্রতিনিধিত্ব করার কথা তুলে ধরা হয়। ঐ দিনই ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্ধারিত বোর্ড সভা। কয়েকজন বোর্ড সদস্য প্রতিবেদনটি সভায় উত্থাপন করেন। এতে বোর্ড সদস্যদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সোলায়মান আলম শেঠ। পরবর্তীতে সোলায়মান আলম শেঠের অবৈধভাবে গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে থাকার বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। এ অবস্থায় গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণের তাগিদে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) স্থানীয় সরকার বিভাগে গত ১৯ জুন একটি আবেদন করে। এ প্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই উপ-সচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি পত্র দেওয়া হয় ওয়াসাকে। একটি পত্রে ওয়াসার গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে একজন ভোক্তা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত সংক্রান্ত বিষয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মতামত দিতে ওয়াসার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরেকটি পত্রে ওয়াসার চেয়ারম্যানকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ধারা নং ৫ এর ১৬ উপ-ধারায় বলা আছে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দেশের সর্বত্র ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আর তারই ধারাহিকতায় ক্যাব সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভোক্তা র্স্বাথ সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণী ও কমিটিগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করে আসলেও চট্টগ্রাম ওয়াসায় তা মানা হয়নি।
তিনি বলেন, প্রকৃত ভোক্তা প্রতিনিধি না থাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার সমস্যাসমূহ কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপনের সুযোগ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবসময় আন্তরিক। তাঁর কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসা বিপুল বরাদ্দ পেয়েছে। এই বরাদ্দ নগরবাসীর জন্য আশীর্বাদ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি এবার ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ যথাযথভাবে অনুসরণ করে গ্রাহক প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসায় পানি ব্যবহারকারীগণের প্রতিনিধি হিসেবে মো. সোলায়মান আলম শেঠ নিয়োগ পান ২০১২ সালে। তিন বছরের জন্য নিয়োগের মেয়াদ ২০১৫ সালে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির আশ্রয়ে তিন বছরের স্থলে তিনি পার করেছেন সাত বছর।