বাদ প্রতিবাদে সরব বিএনপি

21

পূর্বদেশ ডেস্ক

পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের নিন্দা, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে সারাদেশে সরব দলটি। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ খালেদা জিয়াকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহব্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য চরম প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নেতারা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, গত বুধবার ‘বঙ্গবন্ধু’ অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু তৈরি যাতে না হয় তার জন্য বাধা সৃষ্টিকারী ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা নদীতে দুটো চুবনি দিয়ে সেতুতে উঠানো এবং বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ‘টুস’ করে ফেলে দেয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই- আপনাদের এই মন্তব্য ও কটূক্তি করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান। অন্যথায় জনগণ আপনাদের ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ দেবে না। তিনি বলেন, আমরা ভাবতেও পারি না- একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য কী করে আসে। কোনো সভ্য দেশের মানুষ এটা কখনও সহ্য করতে পারে না। কোনো সভ্য সমাজ এবং গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করা যায় না।
ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেছেন, কারণ তিনি এখন নার্ভাস হয়ে গেছেন। তিনি দেখতে পারছেন, তার ক্ষমতার দিন শেষ। তিনি দেখতে পারছেন, এখন আর তিনি সামনে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করার বড়াই করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আপনার একার না। আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। জনগণের পকেটের টাকা থেকে যে ট্যাক্স কেটে নিয়েছেন, সেই জনগণের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। আর এখানে আপনারা যে দুর্নীতি করছেন, সেই দুর্নীতির সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে। জনগণ জানতে চায়, পদ্মা সেতুর জন্য জনগণের কাছ থেকে কত টাকা কেটেছেন? এর মধ্যে কত টাকা পদ্মা সেতুতে ব্যয় করেছেন। আর কত টাকা আপনারা নিজেদের পকেটে ভরেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, আপনি খালেদা জিয়াকে হুমকি দেন? খালেদা জিয়া হচ্ছে সেই নেত্রী, যিনি এদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নেতা। কোনো নির্বাচনে তিনি পরাজিত হননি এবং গণতন্ত্রের জন্য তার সারাটা জীবন তিনি সংগ্রাম ও লড়াই করেছেন। এখনও করে যাচ্ছেন। আর গণতন্ত্রের জন্য এখনও তিনি গৃহবন্দী হয়ে আছেন।
আওয়ামী লীগ ‘উন্নয়ন উন্নয়ন’ বলে চিৎকার করলেও জনগণের উন্নয়ন হয়নি বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কার উন্নয়ন করেছেন? উন্নয়ন করেছেন পি কে হালদারের, উন্নয়ন করেছেন আপনাদের শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের। উন্নয়ন করেছেন ফরিদপুরের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও তার ভাইয়ের এবং উন্নয়ন করেছেন আপনাদের নিজেদের। প্রত্যেকে যারা ক্ষমতায় আছেন এবং এই দেশকে একটা লুটপাটের রাজত্বে পরিণত করেছেন। জনগণের কোনো উন্নয়ন হয় নাই।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আজকে দ্রব্যমূল্যের চাপের সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে। কৃষক, শ্রমিক, মজুর যাঁরা দিন আনে দিন খান, তারা আজকে হিমশিম খাচ্ছেন না শুধু, তাঁদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তারা জীবন যাপন করতে পারছেন না।
সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির আহŸায়ক আবদুস সালাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহŸায়ক আমানুল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নাল আবেদিন ফারুক, খাইরুল কবির খোকন প্রমুখ।
এদিকে গত রোববার পুরান ঢাকায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল শুরুর প্রাক্কালে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়াকে পদ্মা নদীতে ‘টুস করে ফেলে দেওয়া’র যে হুমকি দিয়েছেন তা রীতিমতো ‘এটেম্পট টু মার্ডার’। এটা স্পষ্টই হত্যার হুমকি। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সিনিয়র নাগরিক সম্পর্কে শেখ হাসিনা যে ভাষায় কথা বলেছেন তা গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য শিষ্টাচারকে অতিক্রম করেছে। তার বক্তব্য সরাসরি নারীবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী। গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে কোনো প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে এমন বক্তব্য বের হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তিনি সরাসরি দেশের একজন সম্মানিত ও সাবেক নারী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন।
বোয়ালখালীতে গতকাল শ্রমিক দলের অভিষেক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কুরুচিপূর্ণ কট‚ক্তিতে দেশবাসী হতাশ। অবিলম্বে এ ধরনের করুচিপূর্ণ কট‚ক্তি প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের জনগণ বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। দেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সামনের সারিতে আছেন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ছিলেন তিনি আপসহীন। অথচ তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রাবণের বিরুদ্ধে মিথ্যা-মামলা দেওয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসবে গতকাল মহানগর ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্যে সংগঠনের আহŸায়ক সাইফুল আলম বলেন, আপোসহীন দেশনেত্রী আমাদের আদর্শিক মা বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কুরুচিপূর্ণ কট‚ক্তি করেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি ঘটলে ছাত্রদল রাজপথেই কঠিন জবাব দিবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশনেত্রীর মুক্তি ও দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ছাত্রদল যেকোন বাধা অতিক্রম করতে প্রস্তুত ইনশাআল্লাহ।
সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন বলেন, ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কটূক্তি করেছেন যা পরোক্ষভাবে হত্যার হুমকি।
তিনি বলেন, আওয়ামী প্রসাশন ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বন্ধ না হলে ছাত্রদল রাজপথে এর কঠিন থেকে কঠিনতর জবাব দিবে।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কট‚ক্তি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রাবণের বিরুদ্ধে মিথ্যা-মামলা দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় রেল স্টেশনস্থ নগরীর ষোলশহর থেকে শুরু হয়ে ২ নং গেটে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ফ্যাকাল্টির ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।