বাদী পক্ষের সাক্ষী যখন আসামির পক্ষে

66

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাঙ্গুনিয়ায় যুবলীগ কর্মী হাফেজ মাহবুব আলম হত্যাকান্ডটি খুব আলোচিত। থানা পুলিশ এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আদালতে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচারকাজ শুরু হয় গত বছর। সম্প্রতি র‌্যাবের জওয়ানরা চাঞ্চল্যকর এ মামলার পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে মামলার অন্যতম প্রধান আসামি আনিসুল ইসলাম প্রকাশ মোদাচ্ছের ১৬ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ১৭ জানুয়ারি জাশেদ চৌধুরীকে ফেনী থেকে, কামাল চৌধুরী প্রকাশ প্যান্ট কামালকে গত ১৪ ডিসেম্বর রাঙামাটি এবং ১৫ জানুয়ারি তৌহিদ চৌধুরীকে রাণিরহাট এলাকা থেকে র‌্যাবের অভিযান দল আটক করে। কারাগারে যান উল্লেখিত আসামিরা। এলাকার সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে র‌্যাবের এ অভিযানে। আসামিদের মধ্যে জাশেদ, কামাল ও তৌহিদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক ছিলেন। গত ৩০ জানুয়ারি একসাথে উল্লেখিত চারজনেরই জামিন মঞ্জুর করলেন ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আ স ম শহীদুল্লাহ কায়সার। এসময় হত্যা মামলার বাদী আদালতে উপস্থিত থেকে আসামিদের পক্ষ নেন।এরপর গত রোববার র‌্যাবের অভিযান দল আজিজুল ইসলাম চৌধুরী নামে আরেক পলাতক আসামিকে ৮ বছর পর আটক করে রাণিরহাট এলাকা থেকে। তারও জামিন হয়ে যায় একই আদালত থেকে গতকাল সোমবার। ৮ বছর পলাতক থেকে গ্রেপ্তারের মাত্র ১ দিনের মধ্যেই জামিন হয়ে গেল এ আসামিরও। গতকালও মামলার বাদী আদালতে উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী অতিরিক্ত জেলা পিপি এডভোকেট রুবেল পাল বলেন, আদালতের কাছে আসামিদের জামিনের আবেদন করা হলে আমরা রাষ্ট্রপক্ষে বিরোধিতা করি। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক জামিন মঞ্জুর করেছেন।
তিনি আরও জানান, মামলার বাদী ভিকটিমের স্ত্রী আসামিদের পক্ষে আদালতে কথা বললে আমরা তাকে নিয়ম অনুযায়ী জেরা করে বৈরী ঘোষণা করেছি।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, মাহবুবকে প্রথমে বেধড়ক পেটানো হয় লোহার রড দিয়ে। এরপর ছুরিকাঘাত। এতেও ক্ষান্ত হননি খুনিরা। মাথার পেছনে হকিস্টিক দিয়ে জখম করে কেটে দেয় পায়ের গোড়ালি। তারপরও মৃত্যু নিশ্চিত করতে করা হয় গুলি। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর এলাকায়। ইসলামপুর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের ঠান্ডাছড়ি এলাকায় একটি খামার বাড়িতে লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে উঠে আসে খুনের এই ইতিবৃত্ত। অথচ রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ চার মাস তদন্ত শেষে দিয়েছিল চূড়ান্ত প্রতিবেদন।
সিআইডি দুই বছর চার মাস তদন্ত শেষে ১৬ জনকে আসামি করে গত বছরের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। একই বছরের ১৭ মে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অন্য দুজন জামিনে আছেন।
প্রসঙ্গত: ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুরে গলাচিপা এলাকার বাড়ির পাশের একটি চায়ের দোকান থেকে মাহবুব আলমকে দুপুরে তুলে নিয়ে যায় একদল দুর্বৃত্ত। একই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের ঠান্ডাছড়ি এলাকার একটি চা-বাগানের পাশ থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী মোরশেদা বেগম বাদী হয়ে ছয় দিন পর ২২ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা করেন। হত্যাকান্ডের পর ৪ মাস তদন্ত শেষে রাঙ্গুনিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শুভ রঞ্জন চাকমা পরের বছরের ৬ মার্চ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। পুলিশের দেওয়া এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী। ২০১৫ সালের ৮ জুন আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মো. হোসাইন খান। তিনি বদলি হলে পরিদর্শক জসীম উদ্দিন খান তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। পরে তিনি বদলি হলে পরিদর্শক আবদুল্লাহ ভূঁইয়া তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেন আদালতে। সিআইডির অভিযোগপত্র অনুযায়ী এতে অংশ নেন ১৬ আসামি।
আসামিদের ধরার বিষয়ে র‌্যাব-৭ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, হত্যা মামলায় দীর্ঘদিনের পলাতক এসব আসামিকে ধরে আমরা আইনের হাতে সোপর্দ করতে সমর্থ হয়েছি। অভিযান আরও চলবে।