বাজেট ২০২০-২০২১ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে

450

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ আর্থিক প্রস্তুতি এবং এর ক্ষতি পুশিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েই গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে। এতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশ। এখানে মোট রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, বিদেশি উৎস থেকে সহায়তা ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং বাজেট ঘাটতি প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এবারের বাজেট কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়ক হবে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সুদৃঢ় করণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এটাই মানুষের প্রত্যাশা। সেই লক্ষ্যে সরকার জাতীয় বাজেটের ১৫শতাংশ থেকে শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বৈশ্বয়িক অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে এবারের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ দিয়েছে ১১.৬৯%। করোনা মহামারির কারণে মার্চ ২০২০ থেকে মানুষ যে ধরনের স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষা ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে, তা থেকে উত্তোরণের জন্য এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, জরুরি অবস্থায় শিক্ষা, কর্মসৃজন, ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে তা সবারই প্রত্যাশা। তবে বাজেটে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১,০৩,০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থাকলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য বাজেট প্রণয়নে ব্যবসায়ীদের ভূমিকাবে দায়ি করেছেন। তবে এ কথা ঠিক বাজেট পূর্ব আলোচনায় আমরা শুনছিলাম এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে প্রায় ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ মানব সক্ষমতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর দেখলাম বরাবরের মতোই এবারও শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে ৮৫,৭৬০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ১৫.১০% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি অত্যান্ত জটিল। সাধারণ শিক্ষা পরিবার এ বিষয়টি গভীরে গিয়ে পর্যালোচনা না করলে খুশি হওয়ারই কথা। বাস্তবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট দিয়ে করোনাকালীন মিক্ষায় যে ক্ষতি তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবেনা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞমহল। তাদের বিশ্লেষণ হল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ মিলিয়ে মোট ৬৬, ৪০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা খাতে প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ১১.৬৯ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ০.০১% বেশি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় প্রকৃত অর্থে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কমে গেছে, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্য অর্জনে অন্তরায় হতে পারে।
আমরা মনে করি, করোনার এই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কার্যক্রমের আওতায় জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষা পরিচালনার জন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিক্ষার নতুন চাহিদা পূরণের জন্য শিক্ষকদের প্রস্তুত করা ও শিক্ষা অধিকার রক্ষা করতে হলে শিক্ষা খাতে প্রস্তাবিত বাজেট পর্যাপ্ত নয়। এখাতে আরো বরাদ্দ বড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
এবারের বাজেটে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কিছু প্রত্যাশার মধ্যে অন্যতম ছিল শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহারের অগ্রগতি। বিশেষ করে করোনাকালে গত ১৭ই মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইসিটি ডিভিশন এবং একসেস টু ইনফরমেশনের সহযোগিতায় গৃহীত উদ্যোগটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। এ সময় সংসদ টেলিভিশন চ্যানেল ব্যবহার করে যে বিকল্প দূরশিক্ষণ পদ্ধতি চালু হয়েছে তার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা স¤প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে রেডিও এবং মোবাইল ফোন প্রযুক্তি যুক্ত হলে শিখন ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে যাবে। কোভিড পরবর্তী সময়েও এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন।
একই সঙ্গে শিক্ষকদের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া, বিশেষ করে নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারণ, প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা, আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার মতো এসব কার্যক্রম মিলিয়ে শিক্ষা খাতে ন্যূনতম ১৫% বরাদ্দ দেয়া সময়ের দাবি। সরকার শিক্ষা খাতের বাজেট নিয়ে পুনর্বিবেচনা করবে-এমনটিই আমরা আশা করি।