বাজেট অধিবেশনে ছয় কাউন্সিলর অনুপস্থিত!

36

সব কাউন্সিলরকে উপস্থিতির চিঠি দিয়ে বাজেট অধিবেশন করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্য করেই বাঁশখালী পৌরসভার বাজেট অধিবেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়েও বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত থাকেননি স্থানীয় সংসদ সদস্যও। সভায় ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছয়জন। দর্শক সারিতে পৌরবাসীরও উপস্থিতি ছিলো কম। এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যে গত বুধবার বিকালে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য ১০৫ কোটি ২১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন পৌরমেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী।
চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাজেট অধিবেশনে কাউন্সিলরদের উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। যদি কোরাম পূর্ণ না হয় তাহলে সে অধিবেশনের কার্যকারিতা থাকে না। এখন অভিযোগ পেয়েছি অনেক কাউন্সিলর অনুপস্থিত ছিলো। তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমি মেয়রকে বলেছিলাম। উনি আমাকে জানিয়েছেন সবাইকে নোটিশ করা হয়েছে, যার প্রমাণ উনার কাছে আছে। প্রমাণ আমাকে দিতে বলেছি। এখন যদি কোনো কাউন্সিলর নোটিশ না পায় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’
বাঁশখালী পৌরসভার সচিব নুরুল আবছার পূর্বদেশকে বলেন, সবার জন্য দাওয়াত কার্ড ছাপানো হয়েছে। তবে কার্ড দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন মেয়র সাহেব। ডিসি অফিস থেকে অনুষ্ঠান বন্ধের জন্যও মেয়রকে বলা হয়েছে বলে শুনেছি। সংসদ সদস্যের অনুপস্থিত থাকার বিষয়েও জানি না। তবে সবকিছু ময়র সাহেব ভালো জানবেন।
এ বিষয়ে জানতে বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানা যায়, বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে চার কোটি ৫৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। উন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ৬২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। উন্নয়ন হিসেবে বিশেষ প্রকল্প খাতে অনুদান ৯৮ কোটি টাকা। অনুষ্ঠান মঞ্চে লাগানো ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু সংসদ সদস্য পৌরসভায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেলেও সভায় উপস্থিত থাকেননি। শেষতক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার। এছাড়াও প্যানেল মেয়র দেলোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর দিলীপ চক্রবর্ত্তী, নজরুল কবির সিকদার, মোহাম্মদ হারুন ও রোজিনা আক্তার অনুপস্থিত ছিলেন।
বাঁশখালী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিলীপ চক্রবর্ত্তী পূর্বদেশকে বলেন, আমি বাজেটের বিষয়ে জানি না। মাসিক সভায় উপস্থিত থাকতে পারি নাই। তবে চিঠির মাধ্যমে সবাইকে দাওয়াত দেয়ার কথা থাকলেও এবার তা অমান্য করা হয়েছে। হয়তো মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি বলেই এমন আচরণ করেছেন। প্রতিবার বাজেটে স্থানীয় মুরব্বিদের দাওয়াত দেয়া হলেও এবার তা করা হয়নি। ডব্লিউসিসি কমিটির সাতজন ও সিএলসিটি কমিটির ৫১ জন সদস্যের বেশিরভাগই অনুপস্থিত ছিলেন। শুধুমাত্র বিভিন্ন ওয়ার্ডের যারা মেয়রের অনুগত তারাই উপস্থিত ছিলেন। আর মেয়রের সাথে কতজন মানুষ আছে তা বাজেট অধিবেশনে প্রমাণ হয়েছে। এ বাজেট নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় সংসদ সদস্য পৌরসভায় কার্যালয়ে গিয়েও বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত থাকেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘এমপি মহোদয় অনুষ্ঠানে থাকার জন্যই পৌরসভায় গিয়েছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠানে মানুষ কম থাকায় কৌশলে পাশ কেটেছেন। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে বাঁশখালী পৌরসভার উন্নয়ন নিয়ে বদনামে আওয়ামী লীগও বিব্রত।’
৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবলা কুমার দাশ পূর্বদেশকে বলেন, মেয়র উন্নয়নের টাকা লুটপাট করেছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে বাজেটে অধিবেশনে দাওয়াত দেননি। যে কারণে যাইনি।
বাঁশখালী পৌরসভার ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর রোজিনা আক্তার পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাকে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। মাসিক সভায় তারিখ নির্ধারিত হয়েছে সেটি উপস্থিত থাকায় জেনেছিলাম। আগের বাজেট অধিবেশনগুলোতে চিঠি দিলেও এবার দেয়নি। অথচ অন্য মহিলা কাউন্সিলরদের চিঠি দিয়ে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। দাওয়াত না পাওয়ায় যাইনি।’
এর আগে মেয়রের বিরুদ্ধে ১২টি দুর্নীতি তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্থানীয় সরকার বিভাগসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেন চারজন কাউন্সিলর। যা নিয়ে মেয়রের সাথে কয়েকজন কাউন্সিলরের দুরত্ব সৃষ্টি হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে পৌরসভার কাজ না করে টাকা উত্তোলন, ভুয়া প্রকল্প দেখানো ও আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগ অন্যতম। স্থানীয় সরকার বিভাগে দেয়া অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়াছমিন আক্তার তিবরীজি। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের দেয়া একটি অভিযোগ আমার কাছে তদন্তাধীন আছে। অফিসিয়াল কাজের চাপ থাকায় এখনো তদন্ত শুরু করতে পারিনি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত প্রতিবেদন দেয়া হবে।’