বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, আঞ্চলিক ট্রাস্কফোর্স সভায় মাদক, জঙ্গিবাদ, অস্ত্রের মত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধেও জিরো টলারেন্স থাকবে। মিয়ানমার থেকে যাতে কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি গতকাল সোমবার সার্কিট হাউসে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্স ও বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস পৃথক সভাগুলোর আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক রাখাইনের কিছু কিছু গ্রামে আবারো নতুন করে অত্যাচার, নির্যাতন শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। সেখানকার নির্যাতিত রোহিঙ্গা ও রাখাইনের অধিবাসীরা এখানে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে কক্সাবাজার, বান্দরবান ও অন্যান্য এলাকা হিয়ে এখানে ঢুকে পড়বে। মিয়ানমারের কোনো নাগরিক বা রোহিঙ্গাও যাতে নতুন করে এদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে।
বিভাগীয় কমিশনার মো. মো. আবদুল মান্নান বলেন, পবিত্র মাহে রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মুল্য স্থিতিশীল রাখতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। একই সাথে ফরমালিন ও অন্যান্য কেমিক্যালযুক্ত ফলসহ ভেজাল খাবার রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রমজানে বাজার যাতে অস্থিতিশীল না হয় সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনী বাজার তদারকিতে সহযোগিতা করবে। চট্টগ্রামের বৃহত্তম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারী বাজার গুলোতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিংসহ মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করলে চিহ্নিত ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। ছিনতাই ও অপকর্ম রোধসহ ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিষেক দাশ।
তিনি বলেন, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে তেল পাচার রোধে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল আরো জোরদার করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটতে পারবে না। সরকারের নির্দেশে জনগনের স্বার্থে আজ থেকে সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এটাকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবিদের মধ্যে যাতে ধরনের আনরেস্ট না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখাসহ দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ ও চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এসব অপরাধ রোধে প্রশাসন থাকবে জিরো টলারেন্স। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কর্তৃক বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার তথ্য বিবরণী, নিষ্পত্তি ও অগ্রগতির প্রতিবেদন নিয়মিত দাখিল করতে হবে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে যানজট নিরসন ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধ রোধে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। সকলের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। মাদক রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে থাকবে জিরো টলারেন্স। অস্ত্র উদ্ধার, চোরাচালানরোধ, জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাগুলোতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, বিভাগীয় পরিচালক (স্থানীয় সরকার) দীপক চক্রবর্তী, বিজিবি’র চট্টগ্রাম রিজিয়নের কমান্ডার কর্নেল মো. মতিউর রহমান, ডিজিএফআই’র চট্টগ্রাম শাখার কর্মকর্তা বি. জেনারেল মোহাম্মদ এমদাদ, বিজিবি বান্দরবানের সেক্টর কমান্ডার মো. জহিরুল হক, কোস্টগার্ড পূর্বজোনের চিফ স্টাফ অফিসার কমান্ডার মোহাম্মদ হাসান, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন (চট্টগ্রাম), আব্দুর রউফ মন্ডল (নোয়াখালী), মো. মাজেদুর রহমান খান (চাঁদপুর), মোহাম্মদ আজিজুর রহমান (কুমিল্লা), মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম (বান্দরবান), অঞ্জন চন্দ্র পাল (ল²ীপুর), একেএম মামুনুর রশিদ (রাঙামাটি), মো. কামাল হোসেন (কক্সবাজার), মো. শহিদুল ইসলাম (খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা), মো. ওয়াহিদুজ্জামান (ফেনী), হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ মহাপরিচালক মো. সামছুল আলম, কাস্টম কমিশনার মো. মাহাবুবুজ্জামান, সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি-ডিবি) এসএম মোস্তাইন হোসেন, কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাটের অতিরিক্ত কমিশনার মাহাফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান পাটওয়ারী, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদার, র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মাশকুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পিপি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, চোরাচালান নিরোধ ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট হরিপদ চক্রবর্তী, মহানগর পিপি এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অঞ্জনা ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। পৃথক সভাগুলোতে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।