বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম শুরু

37

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে। দাম নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আজ (মঙ্গলবার) থেকে মাঠে নামছে জেলা প্রশাসন। নগরীর বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করবে এ টিম। সাথে থাকবে ক্যাব, চেম্বার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার, গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্যান্যরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
ক্রেতা সাধারণের দাবি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বাড়েনি। পণ্যের দাম একবার বাড়লে বিক্রেতারা তা আর কমাতে চান না। ওভাবেই থাকে। তাই প্রশাসনের যথাযথ মনিটরিং জরুরি।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, খাতুনগঞ্জে বাজার মনিটরিং করে লাভ কি? প্রশাসনের উচিত তেল-চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ডেকে সমন্বয় করে কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে চিন্তা করা। আর পেঁয়াজ বা যেসব মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বাড়ছে তা নিয়ে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিন্তা করতে হবে। তারা দেশে কি পরিমাণ পণ্য মজুদ আছে, কি পরিমাণ প্রয়োজন বা আমদানি করবে তা নিয়ে চিন্তা করবে। প্রয়োজনে মালিকদের সাথে সমন্বয় করে ডিউটি ফি প্রত্যাহার করবে। তাতেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। বাজারে মোবাইল কোর্ট করলে বিক্রেতাদের হয়রানি ছাড়া আর কিছুই হবে না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় এক মাস আগে থেকে। অথচ এর মধ্যে প্রশাসনের কার্যকরী কোনো মনিটরিং দেখতে পাইনি। দাম বাড়তে বাড়তে নাভিশ্বাস পর্যায়ে যাওয়ার পর এখন মনিটরিং করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন আমাদের এখানে মোবাইল কোর্ট বা মনিটরিং করা লাগবে না। আবার খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন আমাদের এখানে মোবাইল কোর্ট করা লাগবে না। তাহলে প্রশাসন মোবাইল কোর্ট করবে কোথায় ? এসবের কারণে প্রশাসন অনেকদিন ভোগ্যপণ্যের বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেনি। এতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ পেয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশাসন বা মন্ত্রণালয় তো তাদেরকে লাভ না করে ব্যবসা করতে বলছে না। আমি মনে করি সব জায়গায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা দরকার। এতেই বাজারের কোন জায়গায় সমস্যা হচ্ছে তা বেরিয়ে আসবে। মোবাইল কোর্ট যতক্ষণ বাজারে থাকে ততক্ষণ দাম ঠিক থাকে, চলে আসলে আবার বাড়ে কেন? নিজেদের সচেতন থাকতে হবে।
সরেজমিন কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম গত দুইদিনে কমে আসলেও মসুর ডাল, আদা, চিনি, ভোজ্যতেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখি। এমনকি সবজি, মুরগি এবং ডিমের দামও ডজনপ্রতি অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে গত তিন সপ্তাহে।
ক্রেতা মো. শাহ আলম বলেন, আমরা গত দুই বছর আগে যা আয় করতাম, এখনও তা করি। আমাদের আয়ের কোনো উন্নতি হয়নি। অথচ নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। এটা কোন ধরনের কথা? সরকার এ ব্যাপারে কোনো কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না। পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহারের পর যদি দাম কমতে পারে, তবে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও সাময়িক শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত। যাতে অন্তত আমাদের মত মধ্যবিত্তরা সম্মান নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচতে পারি।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, কোনো ব্যবসায়ী দাম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে না। বিশ্ববাজার তথা আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব চট্টগ্রামেও পড়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি কারও নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নেই। বাজারে কোনো ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারবে না। আমরা সবসময় তদারকির মধ্যে রেখেছি। কারো অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকব। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করবে। বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ তৈরি করতে পারবে না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের যাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে না হয় সে ব্যবস্থা করেন। আমরা ডিজিটাল মূল্য তালিকা করে দেব। এক মাসের মধ্যে ডিজিটাল মূল্য তালিকা হবে। আমরা এটা নিশ্চিত করব। এছাড়াও বাজারভিত্তিক কমিটি রয়েছে। বাজারে যদি কোনো সমস্যা দেখি আমরা সরাসরি বাজার কমিটিকে ধরব। ভেজালের বিষয়েও আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। যদি ভেজালের কোনো খবর পান সঙ্গে সঙ্গে খবর দেবেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।
পেঁয়াজের দামবৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, বন্যা হয় ভারতে দাম বাড়ে বাংলাদেশ। কেন? এত টাকা কেন লাগবে। এত বড়লোক হয়ে কী হবে। করোনায় অনেক মানুষ চলে গেছেন। হাসপাতালে বেড পাননি অনেকে। নিজেদের সচেতন হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব। যাতে কেউ আমাদের দোষ বলতে না পারে। প্রথমে আমরা সতর্ক করব। পরে কঠোর হব। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে আমাদের মনিটরিং টিম মাঠে থাকবে। সাথে ক্যাব, চেম্বার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার, গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্যান্যরাও থাকবেন।