বাজারে শীতের সবজি দামও বেশি

15

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হয়। এতে অনেক ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সবজির বাজারে। শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমেও সবজির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর বাকলিয়ার কালামিয়া বাজার ও বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে।
সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন উপজেলায় তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর সাথে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। ফলে ডিসেম্বর মাস সবজির ভরা মৌসুম হলেও বাজারে শাক-সবজির দাম বাড়তি।
বহদ্দারহাট সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি নতুন আলু কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা ও পুরাতন আলু ২৫ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, মূলা ৩৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, কাঁচা মিষ্টি কুমড়া ৩৫ টাকা, পাঁকা মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ধনিয়া পাতা ৭০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, গাজর ৯০ টাকা, শসা ২৫ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, লাউ ৩৫ টাকা, পটল ৪০ টাকা, তিতা করলা ৬০ টাকা, কাকরোল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, একজোড়া লেবু ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লালশাক, পালংশাক, মূলাশাক, সরিষা শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং পুঁইশাক ২০ ও লাউশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে আঁটি বিক্রি হচ্ছে।
বহদ্দারহাট বাজারে সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, জ্বালানী তেলের দাম বাড়ায় পণ্য পরিবহনেও খরচ বেড়েছে।তাই সবজির দামও তুলনামূলক বেড়েছে। এছাড়াও মাসের শুরুতে তিনদিনের বৃষ্টিও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি সবজিতে মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ফলে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৪০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া রসুঁন ১৬০ টাকা, আদা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, খোলা পাম অয়েল ১৩৫ টাকা এবং পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮২ টাকায়। আর সব ধরনের প্যাকেটজাত চিনির নির্ধারিত দর ৭৫ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। খোলা আটা গত সপ্তাহে ৩৩ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ৩৫ টাকা, ময়দা ৪৩ টাকা থেকে ৩ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত আটা ৪২ ও ময়দা ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে মসুর ডাল। প্রতিকেজি আমদানি করা মসুর ডাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও দেশি মসুর ডালের দাম ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে হলুদ ১৬০ ও শুকনা মরিচ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। প্রতিকেজি রুই-কাতলা ২৮০ থেকে ৩০০, শোল ৫৫০, শিং ও টাকি ৩৫০, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি বড় সাইজের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া পাঙ্গাস ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ও চিংড়ি আকারভেদে ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৪৫০, লেয়ার ২৫০ ও সোনালি মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬২০ আর খাসি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কালামিয়া বাজারে মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ আবু তালেব সরকার বলেন, এখন শীতকালে বনভোজন, চড়–ইভাতিসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের মাত্রা বেড়ে গেছে। তাই মুরগির দামটাও পাইকারি পর্যায়ে বাড়তি।
সৈয়দ শাহ রোড এলাকার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম বলেন, যে হারে সবজিসহ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে তা বলা মুশকিল। শীতের মৌসুমে শীতের সবজির দাম কমার কথা। এখন দেখছি তার উল্টো। কোথায়, দাম বাড়ছে বা বাড়ানো হচ্ছে তা চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা বাজার কর্মকর্তা সেলিম মিয়া দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাব বাজারে পড়েছে। তাই কিছু পণ্যের দাম বাড়তি। তবে বর্তমানে পর্যাপ্ত শীতের সবজি বাজারে ঢুকছে। কয়েকদিনের মধ্যে তা কমে আসবে। একইসাথে ভোগ্যপণ্যের বাজারে আমাদের নজরদারী রয়েছে। কারও কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাদের জানাতে পারবেন।