বাঘাইছড়িতে কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

9

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে চাকমা সম্প্রদায়ের এক কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে স্থানীয় দুই ছাত্রলীগ নেতাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ১৫ জুলাই বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের করেঙ্গাতলী বড়য়াপাড়া এলাকায় ওই ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে ভিকটিমের বাবা বাদি হয়ে ওই ৫ জনকে আসামি করে বাঘাইছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি যীশু চৌধুরী (২৭) ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ওরফে সোহেল (২৬) এবং একই এলাকার মো. আরিফ (২৬), মো. রাশেল (২৯) ও অমল বড়ুয়া (৪৫)। স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়া অন্য তিনজনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ছাত্রলীগ।
বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পরই আসামিদের ধরতে বাঘাইছড়ি থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল গিয়ে অভিযান চালিয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, যে কোনো মূহুর্তে আসামিদের গ্রেপ্তার সম্ভব হবে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভিকটিমকে রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে বঙ্গলতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি যীশু চৌধুরী ও সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়াকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার দায়ে তাদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে কিশোর ধরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মো. জনি খানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য জানা গেছে বাঘাইছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের আহব্বায়ক সানি দে ও যুগ্ম আহব্বায়ক শরিফুল ইসলাম সবুজ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ছাত্রীর বয়স ২১ বছর। তিনি কাচালং সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। পূর্ব পরিচয়ের সূত্রর ধরে গত ১৫ জুলাই রাত অনুমানিক ৯ টার দিকে বিপ্লব বড়ুয়া জরুরি আলাপ আছে বলে মেয়েটিকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। পরে মেয়েটি রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন আশেপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন ১৬ জুলাই ভোরে মেয়েটি বাড়ি ফিরলে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। এ সময় সে জানায়, বিপ্লব বড়ুয়া জরুরি আলাপের কথা বলে তাকে বাড়ির বাইরে ডেকে নেওয়ার পর আসামি সবাই তার (ভিকটিম) মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক বড়ুয়াপাড়ায় বিপ্লবের বসতঘরে নিয়ে যায়। সেখানে সারা রাত তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেয়েটিকে পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা চালানোর কারণে মামলা করতে দেরি হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী।
ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনাও। ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বাঘাইছড়ির বঙ্গলতলীর করেঙ্গাতলীতে এবং সাজেক এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে পাহাড়ের তিন সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ। এ সময় দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক- যা মোটেও কাম্য নয়। ঘটনার খবর শোনার পর থেকে সেদিকে নজর রাখছি। আশা করি, শিগগির আসামিরা ধরা পড়বে।