বাকের ভূইয়া সভাপতি, আল মামুন সম্পাদক

54

সীতাকুন্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন গতকাল শুক্রবার বিকালে পৌর সদরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও কাউন্সিলরদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সভাপতি হিসাবে আবদুল্লাহ আল বাকের ভ‚ইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুনের নাম ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করছিলেন, তখন এমপি দিদারুল আলম সভামঞ্চে দু’হাত নাড়িয়ে ‘এই ঘোষণা মানি না, মানবো না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। একই সাথে এমপি সমর্থিত চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলররাও তার সাথে স্লোগান দেন। পরে অতিথিরা সভাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে এমপি দিদারুল আলম বলেন, ‘তৃণমূলকে মূল্যায়ন করে সারাদেশে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। সীতাকুন্ডেও সেটা চেয়েছিলাম। কিন্তু মোশাররফ সাহেব এককভাবে যে সিদ্ধান্ত দিলেন, এতে তৃণমূল নেতারা খুবই মর্মাহত।’
এদিকে সভাস্থল দখল-বেদখল ও সংর্ষের সময় উপজেলার ১নং সৈয়দপুর এলাকার কাউন্সিলর নুর মোহাম্মদ মানিক, সাইফুল ইসলাম, আবুল কাসেম ও জসিম উদ্দিনসহ ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। নুর মোহাম্মদ মানিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
সম্মেলন শুরুর পরপরই দুই গ্রূপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শুরুতে সভাপতি প্রার্থী এসএম আল মামুনের সমর্থিত লোকজন স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে এসে ভিড় করেন। এ সময় তারা নিজ নেতাকে সভাপতি হিসাবে পেতে স্লোগানের পাশাপাশি সভাস্থল দখল করে নেন। এর কিছুক্ষণ পর অপর সভাপতি প্রার্থী আবদুল্লাহ আল বাকের ভূইয়ার অনুসারী নেতাকর্মীরা সভাস্থলে এসে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
এ সময় উভয়পক্ষের উত্তেজিত নেতাকর্মীরা সভাস্থলে লাগানো ব্যানার, ফেস্টুন ছিড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে বাকের ভূইয়ার অনুসারীদের সাথে এসএম আল মামুনের অনুসারীদের প্রথমে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া সভাস্থলের শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। এতে উভয়পক্ষের ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুন্ড) শর্ম্মা রানী সাহা ও সীতাকুন্ড থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ হোসেন মোল্লা এবং ওসি তদন্ত শামীম শেখের নেতৃত্বে পুলিশ উভয়পক্ষের উত্তেজিত নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা সভাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, উদ্বোধক ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সীতাকুন্ড আসনের সাংসদ দিদারুল আলম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু, উপ-দপ্তর সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরী, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ভবতোষ নাথ, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, সীতাকুন্ড পৌর মেয়র বদিউল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রব্বানী, আ ম ম দিলশাদ, ইউপি চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রেহান, এইচএম তাজুল ইসলাম নিজামী, মোরশেদ আলম চৌধুরী, জাহিদ হোসেন নিজামী বাবু প্রমুখ।
পরে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন (কাউন্সিল) হয়। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এমএ সালামের পরিচালনায় দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের ঐকমত্যের ভিক্তিতে আবদুল্লাহ আল বাকের ভূইয়াকে সভাপতি এবং এসএম আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।
এর আগে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে পরিছন্ন ও ত্যাগীদের নেতা নির্বাচিত করা হবে। আজকের সম্মেলনে যারাই নেতা নির্বাচিত হবেন, তাদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্দিনে যারা দলের হাল ধরেছেন, তারা পদ-পদবী না পেলে, ভবিষ্যতে দলের হাল ধরার লোক থাকবে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (বিলুপ্ত কমিটি) মো. ইসহাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক (বিলুপ্ত কমিটি) আবদুল্লাহ আল বাকের ভূইয়ার পরিচালনায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, অতীতের তুলনায় দল আজ অনেক শক্তিশালী। আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা শুধু রাজনীতি করলে চলবে না, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সব বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।