বাকি পাঁচটার যাত্রা কবে?

41

ওয়াসিম আহমেদ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) ভাগ করা হবে ছয়টি আঞ্চলিক জোনে। প্রতিটি জোন হবে ‘মিনি সিটি করপোরেশনের’ মত। একজন নিবার্হী কর্মকর্তার অধীনে থাকবে চসিক প্রদত্ত সব ধরনের সেবার আয়োজন। আট মাস আগে ২৫ জনবল নিয়ে আঞ্চলিক জোন-৬ যাত্রা শুরু করেছে। বাকি পাঁচটিতে প্রেষণে নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ না হওয়ায় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে ধারাবাহিকভাবে সবক’টি আঞ্চলিক জোন অফিস বাস্তবায়ন করে নগরিক সেবাকে আরও গতিশীল করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেন, সেবা কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে সরকারের নির্ধারিত আঞ্চলিক জোনের দিকে এগুচ্ছি। ছয়টির একটি করা হয়েছে। সেখানে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো। তাই বাকি পাঁচটি আঞ্চলিক জোন করার জন্য জনবল ও অবকাঠামোকে সেভাবে প্রস্তুত করছি। তারই সূত্র ধরে পরিচ্ছন্ন বিভাগকে ছয়টি জোনে ভাগ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি জোনের প্রধান হিসেবে থাকবেন একজন করে পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা। আবার প্রতিটি জোনে দুইজন করে ১২ জন তত্ত্বাবধায়ক থাকবেন। প্রতি তত্ত¡াবধায়কের অধীনে দুইজন করে ২৪ জন পরিদর্শক থাকবেন। ওই ২৪ জন পরিদর্শক ৪১ ওয়ার্ডের সেবকদের দৈনিক কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। পরিদর্শকগণ উর্ধ্বতনের কাছে দৈনিক অপসারিত বর্জ্যরে তথ্য উপস্থাপন করবেন।
মেয়র পূর্বদেশকে আরও বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বর্জ্য পরিষ্কার, নালা-নর্দমা পরিষ্কার, মশক নিধন ও ফুটপাত অবৈধ দখলের উচ্ছেদের কাজ করছে। কিন্তু তাদের আলাদা করা কঠিন। তাই আলাদা আলাদা কাজের জন্য ভিন্ন ‘ড্রেস আপ’ করা হবে পরিচ্ছন্নকর্মীদের। এতে নগরবাসী সহজেই তাদের আলাদা করতে পারবে।
গেল সেপ্টম্বরের শুরুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক বেগম আফিয়া আক্তারকে চসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে গত ২৯ অক্টোবর ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৬ এ বদলি করে প্রাথমিকভাবে শুরু করে অফিসটি। গত ৮ ফেব্রæয়ারি ওই অফিসে ১৪ জনবল বদলি করা হয়। যেখানে চসিকের সবক’টি বিভাগের প্রতিনিধি রয়েছে। একইভাবে শীঘ্রই বাকি পাঁচটি আঞ্চলিক জোন শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে আঞ্চলিক জোন-৬ এর অফিস প্রধান আফিয়া আক্তার পূর্বদেশকে বলেন, সিটি করপোরেশন আঞ্চলিক জোনের যাত্রা শুরু হয়েছে। বাকিগুলোর কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। যে আদলে জোন করার কথা ছিল সেভাবে হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের প্রত্যেক বিভাগ থেকে জনবল এখানে পদায়ন আছে। নগরবাসীর প্রাপ্ত সেবাকে সহজ করতে আঞ্চলিক জোন ভালো ভূমিকা রাখছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ছয়টি অঞ্চলকে বিভক্ত করতে হবে। যাতে সিটি করপোরেশন প্রদত্ত নাগরিক সেবাগুলো অধিকতর নিশ্চিত করা হয়। প্রতিটি আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রশাসনিক কাজ, হিসাব রক্ষণ, জোনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, সমাজকল্যাণ, পূর্তকাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ, বৈদ্যুতিক কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ, বস্তিবাসীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদান ও প্রশিক্ষণের দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রত্যেক আঞ্চলিক অফিসে একজন প্রধান থাকবেন এবং কেন্দ্রীয় সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ রয়েছে প্রজ্ঞাপনটিতে।
চসিক সূত্র জানায়, ছয়টি আঞ্চলিক জোনের জন্য ওয়ার্ডগুলোকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ওয়ার্ড নিয়ে ১ নং আঞ্চলিক কার্যালয় গঠিত হয়েছে। এগুলো হলো, ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ড, ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ড, ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড ও ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড। অন্যদিকে ৭টি ওয়ার্ড নিয়ে ২ নং আঞ্চলিক কার্যালয় গঠিত হয়েছে। এগুলো হলো, ৪ নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড, ৫ নং মোহরা ওয়ার্ড, ৬ নং প‚র্ব ষোলশহর ওয়ার্ড, ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড, ১৮ নং প‚র্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড, ১৯ নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড ও ৩৫ নং বক্সিরহাট ওয়ার্ড। এ ছাড়া ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে ৩ নং আঞ্চলিক কার্যালয় গঠিত হয়েছে। এগুলো হলো, ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ড, ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ২২ নং এনায়েত বাজারওয়ার্ড, ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ড, ৩৩ নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড, ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ড, ২১ নং জামালখান ওয়ার্ড, ২০ নং দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড, ৩২ নং আন্দরক্লিল্লা ওয়ার্ড ও ৩৪ নং পাথরঘাটা ওয়ার্ড। ৪ নং আঞ্চলিক কার্যালয় গঠিত হয়েছে ৭টি ওয়ার্ড নিয়ে। এগুলো হলো, ২৩ নং উত্তর পাঠানটুলি ওয়ার্ড, ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ২৮ নং পাঠানটুলি ওয়ার্ড, ২৯ নং পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড, ৩০ নং প‚র্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ড ও ৩৬ নং গোসাইল ডাঙ্গা ওয়ার্ড। একইভাবে ৭টি ওয়ার্ড নিয়ে ৫ নং আঞ্চলিক কার্যালয় গঠিত হয়েছে। এগুলো হলো, ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড, ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড, ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড, ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ড ও ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড। ৫টি ওয়ার্ড নিয়ে ৬ নং আঞ্চলিক কার্যালয় গঠিত হয়েছে। এগুলো হলো, ৩৭ নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড, ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড ও ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে সরকার চসিককে ৩ হাজার ১৮০টি সাংগঠনিক পদের অনুমোদন দেয়। কিন্তু চাকরির প্রবিধান মালা অনুমোদন না হওয়ায় দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় কোনো নিয়োগ ও পদোন্নতি দিতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে অতিরিক্ত দায়িত্ব ও চলতি দায়িত্ব দিয়ে কাজ সেরে এসেছে সংস্থাটি। সর্বশেষ গত বছরের ১১ জুলাই ১৯৮৮ সালের অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর চাকরির বিধামালার অনুমোদন হয়। ফলে এখন নিয়োগ বা পদোন্নতিতে কোনো ধরনের আইনগত জটিলতা নেই। কিন্তু পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের মাধ্যমে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে।