বাকলিয়ায় ৮৮ বছরের পুরনো মসজিদ নিয়ে সংঘাত

25

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ ৮৮ বছরের পুরনো বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডে আবদুল নবী জামে মসজিদের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দুই পক্ষ। যেকোন মুহূর্তে বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে। মসজিদকে কেন্দ্র করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনের এমপি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
স্থানীয়রা বলছেন, মসজিদ নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, কবরস্থান নিয়েও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এ নিয়ে বাকলিয়া থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছেন মসজিদের মালিক আবদুল নবীর প্রকৃত ওয়ারিশ। এছাড়াও প্রতি শুক্রবারে জুমার নামাজের সময় দেয়া হয় কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, এলাকার মসজিদ হিসেবে আবদুল নবী মসজিদে নামাজ আদায় থেকে এলাকার মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন এই বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। মসজিদের বিরোধ নিয়ে দায়ের করা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আবদুল নবী মসজিদের সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করণকালে জালাল উদ্দিন নামে একব্যক্তি প্রতারণার আশ্রয়ে আমান আলী পেশকার বাড়ি মসজিদ ওয়াকফ এস্টেটের দলিল ব্যবহার করে আবদুল নবী মসজিদের নামের স্থলে আমান আলী পেশকার বাড়ি মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট লিপি করান। যা সম্পূর্ণ প্রতারণার সামিল।
এই ঘটনা জানাজানি হলে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। মসজিদের নিয়মিত কর্মকাÐ পরিচালনা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ হামলায় রূপ নেয়। সংঘর্ষ ও মারমারির ঘটনায় গত ১৩ মার্চ বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন আবদুল নবী জামে মসজিদের মূলপক্ষ সায়েরা বেগম। আসামি করা হয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সৈয়দ মোহাম্মদ সজীব, সৈয়দ মোহাম্মদ শাকিলসহ ১১ জনকে। এছাড়া অজ্ঞাত হিসেবে এজাহারে রাখা হয়েছে আরো ৫-৬ জন আসামি।
এদিকে গত ১২ মার্চ মসজিদে আজান দেয়াকে কেন্দ্র করে সৈয়দ মোহাম্মদ এজাজ ও অন্যান্যরা মামলার বাদী সায়েরা বেগমের স্বামী আব্দুল করিমের উপর চড়াও হন। আসামিদের এলোপাতাড়ি মারধরে আব্দুল করিম গুরুতর আহত হন বলে এজাহারে উল্লেখ আছে। মামলায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রকাশ সাজ্জাদকে গত ১৪ মার্চ বাকলিয়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে হাজতে প্রেরণ করেন।
মুসল্লিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুইটি ওয়াকফ স্টেটের আলাদা সম্পত্তি। বংশ পরম্পরায় আবদুল নবীর বংশধর হাফেজ নুরুল আবছার মোতয়াল্লীর কাগজপত্র প্রস্তুত করতে গিয়ে দেখেন যে, বিএস খতিয়ানে আবদুল নবী মসজিদের নামের জায়গায় বাকলিয়া পেশকার বাড়ি মসজিদ পক্ষে মোতোয়াল্লী সৈয়দ জালাল উদ্দিনের নাম লিপি আছে। উপরোক্ত দুইটি ভুল নামের শুদ্ধনাম সংশোধনের নিমিত্ত আবদুল নবীর বংশধর হাফেজ নুরুল আবছার বাদী হয়ে হাজি জালাল উদ্দিনের ছেলে সৈয়দ মো. রফিক উদ্দিন ও সৈয়দ মো. শাহাবুদ্দিনকে বিবাদী করে সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। এছাড়াও আবদুল নবী বংশধরের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট তথা সুপ্রীম কোর্টেও মামলা রুজু আছে।
এদিকে মসজিদ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হাঙ্গামা ও রক্তপাতের আশঙ্কায় রয়েছেন আবদুল নবীর ওয়ারিশ ও মুসল্লিগণ। এতে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হতে পারে। এ নিয়ে বাকলিয়ার সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে দেখা করেন মুসল্লি ও আবদুল নবীর ওয়ারিশগণ। এতে মন্ত্রী মসজিদ ও এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে কড়া নজরদারির জন্য বাকলিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
বিবাদী সৈয়দ মো. রফিক উদ্দিন বলেন, এ মসজিদে আমার বাবা মোতোয়াল্লি ছিল। তার মৃত্যুর পর জেঠা মোতোয়াল্লি হন। আমাদের নামে একটা মিথ্যা মামলা করেছে তারা। বর্তমানে মামলাটি পরিচালনার জন্য আমার জেঠাতো ভাইকে পাওয়ার দিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম পূর্বদেশকে বলেন, আবদুল নবী জামে মসজিদ ওয়াকফ স্টেট নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের কারণে মামলা হয়েছে। গোপনে ও প্রকাশ্যে আমরা খবর রাখছি। শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।