বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্ক ‘স্বর্ণযুগে’

221

বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যে সূচনা করেছিল, বর্তমানে তার ‘স্বর্ণযুগ’ চলছে বলে অনেকেই মনে করছেন। বিশেষ করে, ২০০৮ সালের পর থেকে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি ঘটেছে ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরকালে। তার ওই সফরের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবেশি দুটি দেশের মধ্যে অমীমাংসিত থাকা ছিটমহল, ভূমি ও সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। সেখান থেকেই কার্যত দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্র পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ‘স্বর্ণযুগে’ যাত্রা শুরু করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্কে বয়ে চলা সুবাতাসের মধ্যেই আজ শনিবার ভারতের ৭০ তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে চট্টগ্রামে বরাবরের মত এবারও নানা আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করেছে এখানকার ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশন। এর মধ্যে সকাল সাড়ে নটার দিকে খুলশীর ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশন মিলনায়তনে থাকছে চট্টগ্রামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য নানা আয়োজন। আর রাত সাড়ে সাতটায় হোটেল র‌্যাডিসনে থাকছে প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল আনুষ্ঠানিকতা। যেখানে আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডিনারের আয়োজন রয়েছে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। এছাড়া, চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনের এমপি, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও ভিআইপিদের এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সফরকালে বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পারস্পরিক সহযোগিতার নানা খাতে সম্পাদিত চুক্তিসহ সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে মহাকাশ, তথ্য ও প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস, সাইবার নিরাপত্তা, বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুৎসহ ৯০টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই সফরের পর থেকে দুই দেশের বাণিজ্য সাত বিলিয়ন থেকে বেড়ে নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশ করছে। গত বছর ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি একশ’ ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে (১৩০ মিলিয়ন থেকে ২৮০ মিলিয়ন ডলার)। পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ওই সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের আট বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় ভৈরব সেতু, তিতাস সেতুসহ অতিরিক্ত ছয়শ’ ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপন ও আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন নির্মাণ এবং বিভিন্ন উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করেন। আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্প বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে কলকাতার এক হাজার ছয়শ’ ৫০ কিলোমিটারের দূরত্ব কমে দাঁড়াবে পাঁচশ’ ৫০ কিলোমিটারে। ২০১৫ সালে মাত্র পাঁচ লাখ বাংলাদেশিকে ভারতীয় ভিসা দেয়া হলেও ২০১৭ সালের শেষে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখে। বর্তমানে তা আরও বেড়েছে। ওই বছরেই ঢাকা-খুলনা-কলকাতা ও খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস বাস সার্ভিস এবং ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে কুলাউড়া-শাহবাজার রেললাইন পুননির্মাণ, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি ও দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যে একশ’ ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারত ‘ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ নির্মাণকাজ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী, টঙ্গী-জয়দেবপুর রেললাইনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক পাইপলাইনের একশ’ ২৫ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং পাঁচ কিলোমিটার ভারতের ভেতরে নির্মিত হচ্ছে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ১০ লাখ টন জ্বালানি সরবরাহ করা হবে। প্রথম বছরে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত আড়াই লাখ টন ডিজেল পাঠাবে বাংলাদেশে। পরবর্তীতে প্রত্যেক বছর গড়ে চার লাখ টন ডিজেল সরবরাহ হবে। কুলাউড়া-শাহবাজার রেললাইন পুনর্নির্মাণের মধ্য দিয়ে আসামের করিমগঞ্জ ও ভারতের উত্তর-পূর্বের অন্য প্রদেশগুলোর মধ্যে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ চালু হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দিয়ে। ওই সফরের মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে দুই প্রতিবেশি উদার মনোভাবের পরিচয় দিতে শুরু করে। তখন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অনেক বিষয়ে মতৈক্য পোষণ করেন। সেই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। সেসময় অনেকটা একপক্ষীয়ভাবে বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের মূল ভূখন্ডের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রানজিটের সুুবিধা এবং ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধাদানে রাজি হয়। একইসাথে সীমান্ত সমস্যা সমাধানেও দুই দেশের নেতারা রাজি হওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়নে নতুন ক্ষেত্র নিয়ে তারা মনোযোগী হন। এর মধ্যে বাংলাদেশ কর্তৃক ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং ভারত কর্তৃক এক মিলিয়ন ডলারের ঋণদান উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর অন্যতম। দুই শীর্ষ নেতার যৌথ ঘোষণায় ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরেও অনেকগুলো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আঞ্চলিক বিষয়ে আগ্রহী হলেও ভারত তার বৈশ্বিক বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থন আদায় করতে সমর্থ হয়। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে সম্পর্কোন্নয়নের সমন্বয়কের দায়িত্বে নিয়ে আসায় এসব প্রক্রিয়া রাজনৈতিক নেতৃত্বের সরাসরি তত্ত¡াবধানে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। দুই দেশের সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়ায় জোরালো সমর্থন জ্ঞাপন করে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ওই সফরে কূটনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে লক্ষ্যণীয়ভাবে বাংলাদেশ তার অপেক্ষার নীতিমালা থেকে সরে এসে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে। পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশ স্বল্পমেয়াদি বা ইস্যুভিত্তিক সমাধানের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে পরস্পরের সম্পর্ককে একটি বড় কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে সচেষ্ট হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত করতে বাংলাদেশের সহযোগিতা অপরিহার্য বলেই মনে করে। স¤প্রতি দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তারের আলোকে ভারতও নড়েচড়ে বসে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। ক্রমবর্ধমান আর্থিক উন্নয়নের আলোকে ভারত বাংলাদেশকে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে গণ্য করতে শুরু করে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ভারতের অংশগ্রহণের সুযোগ সম্পর্কে ভারতের নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। গত কয়েক বছরে আঞ্চলিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বার্থ এখন অনেকাংশেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের আমদানি-বাণিজ্যের উৎস হিসেবে ভারত যেমন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লঅভ করেছে, তেমনি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও ভারতের উপস্থিতি এই সময়ে বাড়তে শুরু করেছে। দুই দেশ যোগাযোগের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এ সম্পর্ককে আরও জোরদারে মনোযোগী হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের বণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার বিষয়ে দুই দেশ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী জোরালো অবস্থান প্রতিবেশি ভারতের সামনে অন্তত তিনটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় উগ্রবাদী সন্ত্রাসী তৎপরতার উত্থানের সম্ভাবনাকে শক্ত হাতে দমন করায় বাংলাদেশে ভারতবিরোধী শক্তি দুর্বল হয়েছে বলে ভারত নিজস্ব স্বার্থগত অবস্থান থেকে অনুকূল মনে করে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ভারত নৈতিক সমর্থন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার এক দুর্লভ সুযোগ লাভ করে। এছাড়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে করিডর বা ট্রানজিটের সুবিধা লাভও ভারতের স্বার্থের অনুকূল বলে বিবেচিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে এবং এ ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে সব রকম সহযোগিতা প্রদানে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের উদ্যোগ সন্দেহাতীতভাবে ভারতীয় সরকারি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একধরনের বিশ্বাসের ওপর দাঁড় করাতে সাহায্য করে। একইসাথে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তির প্রত্যাশাকেও উৎসাহিত করে।
সবমিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় পরিচিত পাক-ভারত প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক সম্পর্কের বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে একটি নতুন সম্পর্ক কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে ভারতকে সেই অবস্থানে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়েছে। ভারতও সেই আহবান মর্যাদার সাথেই গ্রহণ করে বলছে, তারা বাংলাদেশকে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সম্পর্কের নতুন মডেল তৈরি করতে চায়। সেই হিসাবে সৃজনশীল ও ভবিষ্যতমুখী ভাবনা এবং নীতি-কাঠামোর মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক নতুন সম্পর্কের ভিত গড়ে দিতে পারে। সেখানে অতীত ও বর্তমানের উপস্থিতি থাকলেও সবচেয়ে বড় আহবান নিয়ে হাজির হবে দুই দেশের ভবিষ্যতের সাধারণ মানুষ।

প্রতিক্রিয়া


দেশ হলো একটি
সম্মিলিত অনুভূতি
ড. অনুপম সেন
উপাচার্য, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেছেন, ভারত যখন ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশের কবল থেকে স্বাধীন হয়, তখনও ভারতের সংবিধান রচিত হয়নি। এমনকি স্বাধীন হওয়ার পরও ভারতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন গভর্নর জেনারেল এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জওহরলাল নেহেরু। ১৯৫০ সালের ২৬ জুন ভারতের সংবিধান রচিত হয়। ফলে সেদিন থেকে জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত হয় ভারত। আবার আমরা পাকিস্তানের ক্ষেত্রে দেখি, প্রায় ৯ বছর পর ১৯৫৬ সালে সংবিধান রচনা করতে পেরেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বাধীনতার মাত্র ১০ মাসের মাথায় ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর সংবিধান রচনা করতে পেরেছে। সেটা বংলাদেশিদের জন্য অসাধারণ অর্জন।
আমরা দেখতে পাই, ভারতে স্বাধীনতা দিবসের মতোই গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে একটু বেশি মর্যাদায়ও পালিত হয়। অর্থাৎ, ওই দেশের জনগণ দিনটিকে সম্মান জানায়। আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। আমাদের সংবিধানের ৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী জনগণ। এটি বঙ্গবন্ধু সংবিধানে যোগ করেছিলেন। মানুষকে মানুষের মতো মর্যাদা দিতে হবে, যেটাকে প্রকৃত মানুষের গণতন্ত্র বলা হয়। এর চেয়ে গণতন্ত্রের বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে না। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশের গণতন্ত্রকে রুখে দেওয়া হয়। তারপর কোনো সংসদে নয়, সামরিক ফর্মান দিয়ে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এমনকি জাতীয় চার মূলনীতিতেও পরিবর্তন আনা হয়। সম্প্রতি একটি মামলার রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ সেই পুরনো সংবিধান ফিরে পেয়েছে। যদিও একটি নীতি এখনও অপরিবর্তিত, কেননা সেটা রাষ্ট্র চায়নি।
দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে মন্তব্য করে এ সমাজবিজ্ঞানী বলেন, এখন দুই দেশের খুবই ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে। সেটা আরও জোরদার হবে যদি দুই দেশের মানুষের বিনিময়, আসা-যাওয়া বাড়ে। তেমনই একটি ধারা বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে। আর সম্পর্কটা কখনও খারাপ হবে না, যদি রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না হয়। তাই দুই দেশেরই এ ক্ষেত্রে সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
ড. অনুপম সেন আরও বলেন, দ্বিজাতি তত্ত¡ দিয়ে পাকিস্তানের জন্ম হয়। আসলে তখন আমরা দুই জাতি ছিলাম না। পাকিস্তানের চারটি উপনিবেশ ছিল। আমরা ছিলাম বাঙালি। শুধু ধর্মের মিল থাকলে একটি দেশ হতে পারে না। দেশ হলো একটি সম্মিলিত অনুভ‚তি। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস যেমন তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, তেমনি আমাদের সংবিধান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- বাংলাদেশ জনগণের দেশ। সংবিধান অনুসারে দেশ পরিচালিত হওয়ার অর্থই গণতন্ত্রকে বুঝায়। যেটা দুই দেশেই চর্চা হচ্ছে।


প্রাচীর কখনও হৃদয়
আটকাতে পারে না
প্রফেসর বিশ্বজিৎ দাশ
কলকাতা উইমেন কলেজ, ভারত
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলকাতা উইমেন কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর বিশ্বজিৎ দাশ বলেছেন, দুটো দেশ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে আলাদা হয়ে গেছে। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে, যারা বিভিন্ন কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু হৃদয়ের বা নাড়ীর টানে তারা এক। যেমন: আমরা উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স-মোনাকো, পূর্ব জার্মানি-পশ্চিম জার্মানির কথা বলতে পারি। আমাদের ভাষা এক, সংস্কৃতি এক হলেও মাঝখানে রয়েছে একটি সীমানা প্রাচীর। এই প্রাচীর কখনও আমাদের হৃদয়কে আটকাতে পারে না। যদি এ দুই বাংলা এক হতো, তাহলে আমাদের সমন্বিত শক্তি হতো। আমাদের দক্ষিণ ভারতে অনেক বাংলাদেশি চিকিৎসা নিতে আসেন। তাকে ভিসার জন্য বসে থাকতে হতো না। তেমনি আমাদের আবেগের জায়গা বাংলাদেশে মনের মতন করে যেতে পারতাম। আমাদের সমস্যাগুলো আমরা একসাথে সমাধান করতে পারতাম। শিক্ষা, গবেষণা একসাথে চালিয়ে যেতে পারতাম। তবে এখনও থেমে নেই। একসাথে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, গবেষণাও একসাথে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমার মাঝে মাঝে অনুশোচনা হয়-কেন বাংলাকে আলাদা করা হলো। কিন্তু একটি সত্যি কথা বলতে আমার দ্বিধা নেই। আমরা পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে থাকি, সেখানে বাংলা ভাষার শুদ্ধতা, পবিত্রতা সবসময় রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভাষা, সংস্কৃতিকে অনেকটা আগলে রেখেছে ‘মান’ দিয়ে। আমরা বাংলা ভাষা বলতে গেলে হিন্দি বা ইংরেজি শব্দ স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। এমনকি আমাদের যে গণমাধ্যম বা বেতারগুলো রয়েছে-সেখানে শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চাটা খুব কম। সে জায়গাটায় পূর্ববঙ্গ অনেক এগিয়ে আছে। খুব সুন্দরভাবে তারা বাংলা ভাষার চর্চা করেন।
বাংলাদেশের আতিথেয়তা সম্পর্কে প্রফেসর বিশ^জিৎ বলেন, আমি পূর্ববঙ্গে গিয়ে দেখেছি তাদের মুগ্ধকর আতিথেয়তা। এটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে শিক্ষণীয়। এভাবে যদি দু’রাষ্ট্র আতিথেয়তায় একে অপরকে আপন করে নিতো আর মাঝের কাঁটা তারটি সরিয়ে দিতো, তাহলে বাংলায় সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব হতো। আমরা গর্ব করে বলতে পারতাম, আমরা বাঙালি, আমরা ভারতবাসী, আমরা বাংলাদেশী।
তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছি আবার ভারতবর্ষেরও দেখেছি। রাজনৈতিক যে নান্দনিকতা বা সৌজন্যতা-এটা নিশ্চিত হয় পারিপার্শি^ক অবস্থা থেকে। অর্থাৎ রাজনীতিকে আমরা যেভাবে পরিচালিত করছি সেটাকে বুঝায়। রাজনীতি কখনো বিচ্ছিন্নতাকে বুঝায় না। রাজনীতির সাথে যদি আমরা মানুষ এবং আমাদের সত্ত¡াকে এক করতে পারি, তাহলে রাজনীতির নান্দনিকতার স্পর্শ আমরা পাবো। আমরা সবসময় প্রত্যাশা করছি, দু’দেশে রাজনীতির নান্দনিকতা বিরাজ করুক। আমাদের দু’দেশে সম্প্রীতির বাধা হয়ে দাঁড়ায় ‘ধর্ম’। আমরা সবসময় ধর্মকে সামনে নিয়ে আসি। যদি শুধু ধর্ম দিয়ে মনের মিল হতো, তাহলে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ কখনও বিচ্ছিন্ন হতো না। আমাদের বাঙালিদের ঐতিহ্য এমনই। আমরা ধর্ম-বর্ণ সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে বরণ করে নিই। সেক্ষেত্রে আমাদের ঐতিহ্যগত ধ্যান-ধারণা নিয়ে একে অপরকে মূল্যায়ন করতে হবে। কোনভাবেই ধর্ম দিয়ে বিচার করা যাবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারতবর্ষে বহুদলীয় রাজনীতি প্রচলিত। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষেত্রটা অনেক সংকুচিত। তাই এ জায়গাটায় বাংলাদেশকে উদার হতে হবে। কেননা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চরিত্র আলাদা। অনেক জায়গায় নিয়মতান্ত্রিক বা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারতবর্ষের গণতন্ত্রের চিত্রও প্রায় একই রকম। তবে শিক্ষার যত প্রসার হবে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠি নিজেদের অধিকার নিয়ে তত বেশি সচেতন হবে। আর তখনই দু’দেশের প্রত্যাশিত গণতন্ত্র নিশ্চিত হবে।


গণতন্ত্রের মূল বিষয়
থেকে পিছিয়ে আছি
প্রফেসর বিকাশ রঞ্জন দেব
মাস্টারদা সূর্যসেন মহাবিদ্যালয়
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাস্টারদা সূর্যসেন মহাবিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর বিকাশ রঞ্জন দেব বলেছেন, ১৯৫০ সালের এই দিনে (২৬ জানুয়ারি) নির্ধারিত হয়-ভারতের কোনো সরকার বংশানুুক্রমিক হবে না, জনগণের মতামত নিয়ে শাসক নির্বাচিত হবেন। যেটা গণতন্ত্রের মূল শর্ত। তাই পুরো ভারতবর্ষে দিনটি গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়। ঠিক একইভাবে যদি বাংলাদেশের কথা চিন্তা করি, আমরা দেখতে পাই-১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র পেয়েছে দেশটি। শত ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও সে গণতন্ত্রের ধারাটা এখনও অব্যাহত আছে। যদিও সত্তর দশকে গণতন্ত্রের যে চর্চাটা ছিল সেটা বিভিন্ন কারণে ম্লান হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা গণতান্ত্রিক অধিকারের জায়গা অনেকটা সংকুচিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারতকে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হলেও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রচন্ড আক্রমণ আসছে। ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন, কেন জানি সবাই মত প্রকাশের কণ্ঠকে রোধ করতে চায়। একই চিত্র আমরা বাংলাদেশেও দেখতে পাই। বিভিন্ন ব্লগাররা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কারণে একটি গোষ্ঠি তাদের হত্যায় মেতে উঠলো বা অনেকে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি তসলিমা নাসরিন স্বাধীনভাবে লেখার কারণে তাকেও দেশ ছাড়তে হলো। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এসব বিষয় কখনও কাম্য নয়। গণতন্ত্রের মূল বিষয় থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরও বলেন, পশ্চিমা দেশে আমরা গণতন্ত্রকে যেভাবে দেখি, সেখানে গণতন্ত্র অনেক শক্তিশালী। সেখানকার গণতন্ত্রে ধর্মের প্রভাব নেই। রাষ্ট্রচিন্তা বা রাজনৈতিক চিন্তায় ধর্ম সেভাবে প্রভাব ফেলে না। ধর্ম থাকবে অনেকটা নিরপেক্ষভাবে। কিন্তু আমাদের দু’দেশেই ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্ম রাজনীতির বড় হাতিয়ার হিসেবে গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করছে।
ভারতের গণতন্ত্র দিবসে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, গণতন্ত্র যাতে আরও প্রসারিত হয়, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো যাতে নিশ্চিত হয় এবং ধর্ম যাতে রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে না পারে। মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে। অবশ্য, রাষ্ট্রবিরোধী কোন মত প্রকাশ কাম্য নয়। তবে আমরা দেখি, সরকার এবং রাষ্ট্রকে এক করে ফেলা হয়। সেটা কখনও উচিত না। এ দুটোই সম্পূর্ণ আলাদা ধারণা। আবার অনেক সময় সরকারবিরোধী মত প্রকাশকে রাষ্ট্রবিরোধী বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রকাশকারীকে বিভিন্নভাবে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জন্মের পর থেকে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তারপরও বাংলাদেশে মাঝে মাঝে ভারতের প্রতি ক্ষোভ দেখা যায় বা অনেক সময় ভারতবিরোধী ‘সেন্টিমেন্ট’ দেখা যায়। তার কারণ হচ্ছে, ভারতের জলবন্টন নীতি বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থান্বেষী ভ‚মিকা। সাম্প্রতিককালে নদীতে বাঁধ দেওয়া ও সুন্দরবনের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দু’দেশের মানুষের মধ্যে একটি কষ্টের রেখা তৈরি হয়েছে। আমার যেটা মনে হয়, ভারতবর্ষ যেহেতু বৃহৎ রাষ্ট্র এবং দুটো দেশই সার্কের অন্তর্ভুক্ত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে সেখানে আমাদের সরকারও সহযোগী ভূমিকা রাখবে। কোনো ধরণের বিনিময় নীতি অনুসরণ না করে সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত। কেননা আমাদের একটি ঐতিহ্যগত অতীত রয়েছে, আমরা সবাই আগে একসাথে ছিলাম। তবে বাস্তবপক্ষে রাজনৈতিক যে বিচার-বিবেচনা চলে বা ধনী-বণিকের যে স্বার্থটা অনুসৃত হয় সেক্ষেত্রে এসব সাহায্যগুলো কখনও নিঃস্বার্থ হয় না। তাই বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। নিজেদের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ঠিক রেখে বৈদেশিক সাহায্যগুলো গ্রহণ করা উচিত।
ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় বাংলাদেশের ভ‚য়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলা ভাষা চর্চায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। আমি বাংলাদেশের বইপত্র, ম্যাগাজিন দেখেছি। সেখানে বাংলা ভাষার সত্যিকারের চর্চাটা অব্যাহত রয়েছে। সেখানে ভাষার প্রতি মানুষের আবেগের ছিটেফোঁটাও আমি ভারতে দেখতে পাই না। আমাদের এখানে হিন্দি আর ইংরেজির দাপটে বাংলা ভাষার চর্চা বা বই পড়ায় অনেক পিছিয়ে। বলতে গেলে পৃথিবীর বুকে বাংলা ভাষার চর্চাটা বাংলাদেশই টিকিয়ে রেখেছে। এমনকি কম্পিউটারে যে বাংলা লিখি, সেটাও বাংলাদেশে আবিষ্কৃত। সেজন্য তাঁদের ‘স্যালুট’ জানাই। আজকের গণতন্ত্র দিবসে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাত্রাটা এগিয়ে যাক-এটাই প্রত্যাশা করি।