বাংলাদেশ-ভারত নদীসেতুতেই নতুন বন্ধন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দু’দেশ

26

গত মঙ্গলবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর দিয়ে দুই দেশকে যুক্ত করা প্রথম সেতুর উদ্বোধন করলেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। দিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদি এবং ঢাকা থেকে শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। সীমান্তের এ ফেনী নদী এতোদিন চট্টগ্রাম থেকে ভারতে সহজ যাতায়াতে বাধা হয়ে দাঁড়ালেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিকতায় সেই বাধা দূর হয়েছে। দুই দেশের সহযোগিতায় এ নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতুই অবশেষে কাছের দুই দেশকে আরো কাছে নিয়ে আসল, সেই সাথে উন্মোচিত হলো অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রনিধানযোগ্য, তিনি বলেছেন, সন্দেহাতীতভাবে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভারতকে কানেকটিভিটি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন যুগের সৃষ্টি করেছে। আমরা এমন একটি অঞ্চলে আছি যেখানে কানেকটিভিটি চালুর বিষয়ে রক্ষণশীলতা ছিল এবং যেখানে সম্ভাবনার চেয়ে আন্ত-আঞ্চলিক বাণিজ্য অনেক কম। আমি বিশ্বাস করি, ব্যবসার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতাগুলো ভৌত বাধা হওয়া উচিত নয়। একইসাথে এ সেতুযোগাযোগের ফলে সম্ভাবনার নতুন দূয়ার উন্মুক্ত হয়েছে বলেও মত দেন তিনি। তাঁর মতে, এই সেতু আমাদের দুই দেশের মাঝে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারবে। মৈত্রী সেতু শুধু ভারতের সঙ্গে নয়, নেপাল- ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্যকে আরও সহজ করবে। একই কথার দ্বিরোক্তি করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘এই সেতুর ফলে ত্রিপুরার তথা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধন একদিকে যেমন সমৃদ্ধির পথে আছে, তেমনি দুই দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক বন্ধনও সুদৃঢ় হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নির্মিত এই মৈত্রী সেতুর কারণে পণ্য পরিবহন এবং পর্যটন খাত আরও উন্নত হবে। সূত্র জানায়, দর্ঘি প্রতিক্ষার এ সেতু উদ্বোধনকালে সীমান্ত রাজ্য ত্রিপুরার সাবরুমে একটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টেরও ভিত্তি স্থাপন হয়। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিপ্লব কুমার দেব অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমকে যুক্ত করেছে। এই প্রথম কোনো নদীসেতু দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত যুক্ত হল। ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামসহ পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন দুই প্রধানমন্ত্রী এ সেতুর ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন। এ সেতুটি ১৩৩ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মাণ করেছে ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড- এনএইচআইডিসিএল। এই সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। ফলে বন্দর থেকে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হয়ে যাবে। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত পৃথক একটি প্রতিবেদনে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন সূত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠলে দুই দেশেরই জাতীয় আয় বাড়বে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের পণ্যবাহী ট্রাক চললে দেশের জাতীয় আয় ১৭ শতাংশ ও ভারতের জাতীয় আয় ৮ শতাংশ বাড়বে বলে দাবি করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালের (বিবিআইএন) মোটর যানবাহনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গত দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে যথেষ্ট পরিমাণে, তবে এটি বর্তমান সম্ভাবনার চেয়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার কম। আঞ্চলিক ও বাণিজ্য ট্রানজিট শক্তিশালী করতে আঞ্চলিক সড়ক, জলপথ করিডোর, স্থলবন্দর, বাণিজ্যের জন্য ডিজিটাল ও সংক্রিয় সিস্টেমে উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করছে বিশ্ব ব্যাংক। ভারতে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জুনায়েদ আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থায় (রেল, অভ্যন্তরীণ পানিপথ ও সড়ক) বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে এই অঞ্চলের অর্থনীতি করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠছে। এখন দীর্ঘমেয়াদী অন্তর্বর্তী ও টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ।