বাংলাদেশে আসার পথে গ্রিসে ‘সমরাস্ত্রবাহী’ বিমান বিধ্বস্ত

20

পূর্বদেশ ডেস্ক

সার্বিয়ার বানানো গোলাবারুদবাহী একটি ইউক্রেইনীয় উড়োজাহাজ বাংলাদেশে আসার পথে গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কাভালার কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স। ওই উড়োজাহাজে সার্বিয়ার তৈরি সাড়ে ১১ মেট্রিক টন সামরিক রসদ ছিল জানিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নেবোসা স্টেফানোভিচ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়’ এসব পণ্যের ক্রেতা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা দপ্তরের কারও বক্তব্য জানা যায়নি।
গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন বলেছেন, এ ধরনের কোনো বিষয় আমরা জানি না। আমরা দেখব।
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি, এই অস্ত্র পুলিশের নয়, কারণ পুলিশ সার্বিয়া থেকে অস্ত্র কেনে না। অন্য কোনো বাহিনীর কিনা তা আমার জানা নেই। আর বিজিবির কিনা তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।
তবে আন্তনভ-১২ পরিবহন উড়োজাহাজটি যে বাংলাদেশেই আসছিল, তা নিশ্চিত করেছেন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রæপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই ফ্লাইট নামার অনুমোদন ছিল আমাদের কাছে। আগামীকাল (আজ) দুপুর ১২টায় সেটা অবতরণের কথা ছিল।
রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয় ইউক্রেইনের উড়োজাহাজটি। ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে পাইলট কাভালা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেন, কিন্তু তার আগেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ড্রোন দিয়ে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের চারপাশে আন্তনভ-১২ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
উড়োজাহাজটিতে আটজন ক্রু ছিলেন। তারা সবাই ইউক্রেইনের নাগরিক বলে জানিয়েছেন ইউক্রেইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
গ্রিস কর্তৃপক্ষ পরিবহন উড়োজাহাজটির বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে না পারলেও ঘটনা তদন্তে দুর্যোগ মোকাবিলার বিশেষ ইউনিট এবং সামরিক বিশেষজ্ঞদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোসা স্টেফানোভিচ বলেন, মর্টার শেল ও ট্রেইনিং শেল ছিল ওই উড়োজাহাজে। রসদ নিয়ে সার্বিয়ার তৃতীয় বড় শহর নিস থেকে উড্ডয়ন করেছিল বিমানটি। বিমানে সাড়ে ১১ টন রসদ বহন করছিল যা আমাদের প্রতিরক্ষা কারখানায় উৎপাদিত। এগুলোর ক্রেতা ছিল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
স্টেফানোভিচ বলেছেন, ওই উড়োজাহাজের রসদগুলো ছিল সার্বিয়ার কোম্পানি ভালিরের তৈরি করা। সার্বিয়ায় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করে সেগুলো বিদেশে বিক্রি করার অনুমোদন রয়েছে বাণিজ্যিক ওই কোম্পানির।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) হিসাব বলছে, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪টি দেশের কাছে ২৬৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে সার্বিয়া। এ সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সর্বোচ্চ ৫৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনেছে দেশটির কাছ থেকে।
সার্বিয়ার স¤প্রচারমাধ্যম ইআরটি জানিয়েছে, ইঞ্জিন সমস্যার কারণে পাইলট গ্রিসে জরুরি অবতরণের অনুমতি চাওয়ার পরপরই উড়োজাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভূপাতিত হওয়ার আগেই উড়োজাহাজটি থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলি ছড়াতে থাকে, যেখান থেকে পরে বিস্ফোরণ ঘটে।
বিমানটি সার্বিয়া থেকে জর্ডানের দিকে যাচ্ছিল বলে এর আগে খবর দিয়েছিল বিবিসি। তবে জর্ডানের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর জানায়, জর্ডানের কুইন আলিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে জ্বালানির নেওয়ার জন্য নামার কথা ছিল বিমানটির। তবে জর্ডান এর শেষ গন্তব্য ছিল না।
উড়োজাহাজটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে, তার আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা শনিবার রাতে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখতে এবং দুর্ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
রোববার সকালে একজন ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণস্থলের উত্তাপে ফায়ার ফাইটারদের ঠোট-মুখ জ্বলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। ঘটনাস্থল থেকে সাদা ধোঁয়া উড়ছিল। খবর বিডিনিউজ।