বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার ক্রমবিকাশ ও উন্নয়নে প্রস্তাবনা

157

এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি

ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগে আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল এবং এতে সাধারণ জনগণের কোন অংশগ্রহণ ছিলনা। উইলিয়াম অ্যাডাম নামে এক ব্রিটিশ নাগরিকের হাত ধরে এই উপমহাদেশে বর্তমান আধুনিক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়।
ব্রিটিশ আমল: উইলিয়াম অ্যাডাম তাঁর আধুনিক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে নি¤েœ উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। ক) জেলা ভিত্তিক শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তকের প্রচলন।, খ) শিক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিটি জেলায় ইন্সপেক্টর নিয়োগ।, গ) শিক্ষকগণের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।, ঘ) জমিদাতাকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগ দিতে উৎসাহ প্রদান।, ঙ) প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বৃত্তির প্রচলন।
বাংলার প্রাথমিক শিক্ষা আধুনিকরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৪ সালে উডের ডেসপাস তত্ত¡ প্রদান করে। উডের তত্তে¡র সুপারিশ অনুযায়ী ১৮৫৫-৫৬ সালের দিকে পাবলিক ইন্সট্রাকশন বিভাগ নামে নতুন বিভাগ চালু করা হয় এবং এতে ইন্সপেক্টর মর্যাদার একটি পদ সৃজন করা হয়। পরবর্তীতে লর্ড কার্জন প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার জন্য ১৯১০ সালে আইন পরিষদে একটি বিল উত্থাপিত হয়। কিন্তু বিলটি খারিজ হয়ে যায়। তবে এর পরিবর্তে পৌর এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য একটি বিল পাশ হয়। ১৯৩০ সালে বেঙ্গল ( পল্লী এলাকা) প্রাথমিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৪ সালে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সার্জেন্ট কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এটিই ছিল প্রথম রিপোর্ট যেখানে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।১৯৪৭ ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলে সার্জেন্ট কমিশনের রিপোট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
পাকিস্তান আমল (১৯৪৭-১৯৭১): দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা এবং বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি রেজুলেশন উপস্থাপিত হয়। সরকার ১৯৫৭ সালে জেলা স্কুল বোর্ড ভেঙ্গে দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার প্রশাসনিক, নিয়ন্ত্রন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের উপর ন্যাস্ত করেন। সাবেক জেলা স্কুল ইন্সপেক্টরগণ জেলা প্রশাসকের অধীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। বেঙ্গল এলাকা প্রাথমিক শিক্ষা আইন ১৯৫১ সালে সংশোধন করা হয়।
সরকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সে লক্ষ্যে ৫০০০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচন করা হয়। অবশিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এ দেশের প্রাথমিক শিক্ষার কোর্সের মেয়াদী ছিল ৪ (চার) বছর। যা পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে ৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদী কোর্সে রুপান্তর করা হয়। বাধ্যতামূলক ও অবাধ্যতামূলক এ দুই ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরী হওয়ার ফলে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ১৯৫৭ সালে পূর্বে তৈরীকৃত ৫০০০ টি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনাকারী বিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তন করে ‘মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ করা হয়। অবশিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অ-মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হয়। মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ অ-মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও তত্ত¡াবধান করতে পারতেন।
পাকিস্তান সরকার প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তাদানিন্তন পাকিস্তানে ১৯৫৯ সালে সর্ব প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। গঠিত কমিশন ১৫ বছরের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে ০৮ (আট) বছর মেয়াদী কোর্সে রুপান্তরের সুপারিশ করে। এ দিকে মডেল ও অ-মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলশ্রæতিতে সরকার মডেল ও অ-মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে নামকরণ করে এবং সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একটি প্রশাসনের আওতায় নেয়া হয়। শিক্ষকদের যোগ্যতানুযায়ী বেতনভাতা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ আমল: ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার পূব আকাশে স্বাধীনতার লাল সূর্য উদিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে প্রাথমিক শিক্ষাকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
রাষ্ট্রের বিধানগুলো হলো : (ক) একটি অভিন্ন জনম্পৃক্ত ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সকল ছেলে-মেয়ের জন্য বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার যা আইন দ্বারা নির্ণয় করা যেতে পারে।, খ) শিক্ষাকে সমাজে চাহিদা সাথে পূরণে সক্ষম প্রশিক্ষিত ও প্রণোদিত নাগরিক বের করা।, গ) একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরকরন আইন দ্বারা নির্ধারণ করা যেতে পারে। সরকার জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার স্বীকার করে যা বাংলাদেশে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।
স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে পুনর্জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারই আলোকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৬,১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১,৫৬,৭২৪ জন শিক্ষককে সরকারি করে প্রাথমিক শিক্ষায় গতির সঞ্চার করেন। উল্লেখ্য যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর শিক্ষা পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে বাংলাদেশ আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৭২ সালে কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করে।
বাংলাদেশের শিক্ষা কমিশন: ১৯৭৪ সালে কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যাবলী নির্ধারণ করা হয়- ১) শিশুদের নৈতিক মানসিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব বিকাশের উন্নয়নের শিক্ষাদান।, ২) শিশুকে দেশপ্রেম, দায়িত্বশীল, অনুসন্ধিৎসু ও আইন পরায়ন নাগরিক হিসেবে তৈরী করা এবং তাদের সততা, সঠিক আচরণ, শ্রম, মর্যাদা, ন্যায় বিচারের প্রতি দয়ালু এমনভাবে বিকাশ সাধন।, ৩) মাতৃভাষায় লিখতে ও পড়তে পারবে এবং গণনা ও হিসাব করতে সক্ষম হবে। ৪) ভবিষ্যত নাগরিকের চাহিদা পূরণে মৌলিক জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।, ৫) পরবর্তী পর্যায়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা। নতুন একটি জাতির আশা, আকাক্সক্ষা ও লক্ষ্য পূরণে শিক্ষা অত্যাবশ্যকীয় এই লক্ষ্যে শিক্ষা কমিশন পূর্বেই প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকারকে নি¤œলিখিত সুপারিশ করেন-
ক. অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সর্বাজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু। খ. অধিক ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আকৃষ্ট করতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে অধিক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করা। প্রয়োজনে বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণ করা। গ. ১৯৮০ সালের মধ্যে বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন এবং ১৯৮৩ সনের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করণ। ঘ. ঝরেপড়া রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আকর্ষণীয় পাঠক্রম চালু, যথোপযুক্ত পাঠ্যপুস্তকের উন্নয়ন এবং বিদ্যালয় পরিরবেশ উন্নয়ন। ঙ. অভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, যা বৈজ্ঞানিক, বাস্তব ভিত্তিক সামাজিক অবস্থান সাথে মানানসই এবং পরিবেশের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। চ. প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু। ছ. শিক্ষক প্রশিক্ষণ পদ্ধতির সম্প্রসারণ এবং যথোপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন। জ. প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড স্থাপন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও দিকনির্দেশনার মধ্যে দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় গতির সঞ্চার হয়।
প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা: প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষা জীবনের মূল ভিত্তি। যে কোন দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ: ১) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার আদর্শের ধারাবাহিকতায় ৯ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি. ২৬,১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং ১,০৩,৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেন। ২) প্রাথমিক শিক্ষাখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন কর্মসূচী-৪ এর মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। ৩) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ৪) বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশু ভর্তির হার প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন কার্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ৫) বছরের ১ম দিনেই বিনামূল্যে শতভাগ নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ৬) ঝরেপড়া রোধ উপবৃত্তি প্রদান এবং স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ৭) শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার জন্য ২০১১ সালে কারিকুলাম রিভিশন করা হয়েছে। ৮) ২০১৯ সাল থেকে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমটি বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী সাফল্য। অধিকাংশ অভিভাবক এই কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন। ৯) যোগাযোগ ও তথ্য আদান প্রদান সহজ করার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার বিতরণ করা হয়েছে। ১০) পিটিআই সমূহে আইসিটি ল্যাব স্থাপন করে শিক্ষকদের আইসটি ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। যাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষালাভ করতে পারে। ১১) সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সরবরাহ করে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান নিশ্চিত করা হচ্ছে। ১২) ই-মনিটরিং এর মাধ্যমে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হচ্ছে। ১৩) পিটিআই সমূহে ভিডিও কনফারেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। ১৪) পিটিআই সমূহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই. ই. আর এর অধীন ১৮ মাসব্যাপী ডিপ্লোমা ইন-প্রাইমারী এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স চালু করা হয়েছে। ১৫) উপজেলা রির্সোস সেন্টারসমূহে শিক্ষকদের জন্য বিষয় ভিত্তিকসহ দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৬) শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনমাফিক নীড বেইজড্ সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৭) জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষায় বিভিন্ন অবদানের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে উপজলো, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হচ্ছে। ১৮) শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিবছর আন্তঃপ্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। ১৯) শিশুদের মধ্যে যাতে নেতৃত্বের মনোভাব জাগ্রত হয় এবং গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে উঠে সে জন্য ২০১০ সাল থেকে স্টুডেন্টস কাউন্সিল চালু এবং সেবামূলক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য ক্ষুদে ডাক্তার টিম গঠন করে জাতীয় টিকা দিবসে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে। শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার করা হচ্ছে। ২০) ২০১২ সাল হতে ¯িøপ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোকে শিশু/শিক্ষা-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোল হচ্ছে। ২১) সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আনন্দ স্কুল এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। ২২) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরন ও সহযোগী উপরকণ প্রদান করে একই ধারায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২৩) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মেরামত ও সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। ২৪) জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা স্তর ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে এবং এর অংশ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় এক বা একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৮ম শ্রেণীতে উন্নিত করা হয়েছে। ২৫) জেলা পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের বিদেশে শিক্ষা সফর এবং দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষকদের বিদেশে মার্স্টাস ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ২৬) শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ এবং পদ বৃদ্ধি জন্য প্রতিবছর হাজার হজার শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। ২৭) প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে প্রতিবছর নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করে শিশুদের জন্য শিশু/ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ২৮) শিশুদের বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী করার জন্য শাস্তি মুক্ত পাঠদান ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
সর্বোপরি শিশদের আগামী দিনের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই সরকারের পাশাপাশি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকতা, কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকগণকে সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার ভবিষ্যৎ : আজকের শিশু আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। এমতাবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন অত্যাবশ্যক। এখন প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগতমান অর্জন হলে সর্বক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। অন্যথায় দেশের অগ্রগতির বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
এমতাবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে নিম্নবর্ণিত চাহিদাসমূহ পূরণ করা জরুরী- ১) স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার বাস্তবায়ন। ২) সহকারী শিক্ষক পদ হতে মহাপরিচালক পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি। ৩) প্রতিটি বিদ্যালয়কে একশিফ্টে রূপান্তর করণ। ৪) শিক্ষক ঘাটতি পূরণ। ৫) প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ। ৬) শিক্ষকদের সম্মানজনক ও উচ্চতর বেতন গ্রেড প্রদান করা। ৭) বিদ্যালয় পরিদর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বেশি বেশি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা। ৮) যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষকদের বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান। ৯) দক্ষ এবং পরিশ্রমী শিক্ষকদের প্রণোদনা প্রদান। ১০) প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন আয়া, একজন হিসাব সহকারী নিয়োগ প্রদান। ১১) ধর্ম, চারুকারু ও সংগীত বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ। ১২) প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ, শিক্ষা সংক্রন্ত আইসিটি সামগ্রী প্রদান করে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা। ১৩) বস্তি শিশু, ভাসমান শিশু, যৌনকর্মীর শিশু, নিবর্ণের শিশু ,বেদে শিশু এবং বিভিন্ন কলকারখানায় নিয়োজিত শিশুদের শিক্ষার আওতায় এনে শিক্ষাদান। ১৪) প্রতিটি উপজেলায় তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া এলাকায় একটি করে আবাসিক বিদ্যালয় এবং একটি করে আবাসিক প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করে পিছিয়ে পড়া এলাকার শিশু ও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ অবারিত করা।
সর্বোপরি অভিভাবকগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করে উল্লেখিত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। ফলে আজকের শিশু আগামীতে বাংলাদেশের উন্নয়নে সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। তাহলে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হবো। (তথ্যসূত্র- শিক্ষা তথ্য।)

লেখক: সভাপতি- রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।