বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনা : প্রেক্ষিত চট্টগ্রাম

28

এ.এফ.এম. আখতারুজ্জামান কায়সার

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা আজ বিশে^র রোল মডেল। এই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষিত, নিপীড়িত, বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। আর তাঁরই সুযোগ্য কন্যা পরিবর্তনের অগ্রদূত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সঠিক দুরদর্শী পরিকল্পনা ও সাহসী নেতৃত্বগুনে দেশকে উন্নতির শিখরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যেমন: ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৬ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৮২৪ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে রেকর্ড করেছিল বাংলাদেশ। বিশ^ব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে বিশ^ অর্থনীতির মন্দা সত্তে¡ও ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। দিন বদলের সনদ রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিজয় লাভ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এরপর ধাপে ধাপে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করেছেন। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুইটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদÐেই উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, মেট্রোরেল প্রকল্প, দোহাজারী – কক্সবাজার – ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, পায়রা বন্দর, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা প্রকল্প জননেত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বৃহৎ অর্জন।
সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম থেকেই ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে দেশের মোট রাজস্ব আয়ের অনেক বড় অংশ চট্টগ্রাম থেকেই আসে। এই বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের উন্নয়ন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার ছাড়া অন্য সরকারসমূহ চট্টগ্রামের উন্নয়নে কার্যতঃ কোন ভ‚মিকাই পালন করেননি। কিন্তু সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে চট্টগ্রামের উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়েছেন।
২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে বলেছিলেন, ‘গত জোট সরকারের আমলে দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে চট্টগ্রামের কোন উন্ন্য়ন হয়নি। আজ থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজে নিয়েছি। মহাজোট ক্ষমতায় গেলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী। চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন, পানি সমস্যার সমাধান, কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণসহ চট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে।’ এরপর জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে একর পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই টিউব বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু টানেল, যার এক টিউবের কাজ শেষে উদ্বোধন হয়েছে। ৩ হাজার ২ শত ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৭ কি.মি. এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজও শেষের পথে। বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, মুরাদপুর-লালখানবাজার আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, স্টেশন রোড-দেওয়ানহাট ওভার পাস, পতেঙ্গা ফৌজদারহাট মেরিন ড্রাইভ, আউটারসিটি রিং রোড, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উন্নয়ন, বায়েজীদ-ফৌজদারহাট বাইপাস রোডের সুফল চট্টগ্রামবাসী ভোগ করছে। তাছাড়া মদুনাঘাট পানি শোধনাগার, রাঙ্গুনিয়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগার চট্টগ্রাম ওয়াসার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। আনোয়ারা ইকোনোমিক জোন ছাড়াও মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে এ অঞ্চলে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রাম -কক্সবাজর ও পর্যায়ক্রমে ঘুনধুন পর্যন্ত রেল পথ। মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর, চাক্তাই হতে কালুরঘাট পর্যন্ত ৮ কি.মি. রিভার ড্রাইভ রিং রোড এর কাজ চলছে। এছাড়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে বাঁশখালি ও মাতারবাড়িতে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পও অনুমোদিত হয়েছে। সূতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারই চট্টগ্রামের সব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, ’বাংলাদেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা এবং আমাদের বাণিজ্যনগরী হচ্ছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের উন্নয়ন করা আমাদের একটি দায়িত্ব বলে মনে করি। চট্টগ্রাম উন্নত হওয়া মানে পুরো বাংলাদেশের উন্নয়ন, এতে কোন সন্দেহ নাই। ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি- রপ্তানিসহ সব ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের অবদান রয়েছে।’ পরিশেষে বলতে চাই, চট্টগ্রাম তথা বাংলদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পরিবর্তনের অগ্রদূত, উন্নয়নবান্ধব, দেশপ্রেমিক, মানবিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জননত্রেী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।
লেখক : রেজিস্ট্রার, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় চট্টগ্রাম