বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি দেখে আনন্দিত চীন

20

পূর্বদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি দেখে চীন আনন্দিত বলে জানিয়েছেন ওই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। রবিবার (৭ আগস্ট) সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একথা জানান। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের মধ্যে এক ঘণ্টা দুই পক্ষের আলোচনা হয়েছে এবং বাকি সময় চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। শাহরিয়ার আলম বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি পাঁচ বছর পরে বাংলাদেশে আসলেন এবং এর অর্ধেক সময় সারা বিশ্ব কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। এরপরও বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন করে যাচ্ছে, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে। এটি দেখে চায়না অত্যন্ত আনন্দিত।’ তিনি বলেন, সারা বিশ্বের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পাশে চায় চীন। প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, বিশ্ব পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আছে একটি ভালো জীবনের এবং আমাদের সকলের বড় শত্রু হওয়া উচিত দারিদ্র। প্রতিমন্ত্রী জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যারা ভিসা পাচ্ছে না, তাদের দুই-এক দিনের মধ্যে ভিসা দেওয়া শুরু করবে চীনা দূতাবাস। চীন আগে থেকেই বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছিল। তিনি জানান, নতুন যে পণ্যগুলো শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত হলো সেটি আজকের মধ্যে জানিয়ে দেবে দূতাবাস। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা করার জন্য আলোচনার করতে সম্মত আছে চীন। প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় যে চীনের সহযোগিতায় যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে চীনের অধিক পরিমাণ কল-কারখানায় ও প্রযুক্তি স্থাপন করতে সহায়তা করা হবে জানিয়েছেন চীনের মন্ত্রী। এছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল শেষ করার জন্য তিনি বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়েছেন যাতে পরে এটি দ্রুত চালু করা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলিতে তারা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ সমঝোতা স্মারক করতে চান।’ বিশ্বের সৌর বিদুতের ৫০ শতাংশ যন্ত্রাংশ চীন থেকে সরবরাহ করা হয় এবং এই নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাইলে চীন সহায়তা করবে বলে তিনি জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন অধিক পরিমাণে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশে আনার জন্য বিষয়টি জানিয়েছেন। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়টি উত্থাপন করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ’চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন মিয়ানমারের যে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেগুলো কারণে শুধু বাংলাদেশ না, অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে চীন অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুব জোরালোভাবে বলেছেন যে এক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন এবং চীন অনেকদূর এগিয়ে ছিল। ওই এগিয়ে যাওয়ার একটা সমাপ্তি দরকার ‘ দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পরে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেগুলো হচ্ছে ১. পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতুর হস্তান্তর সনদ, ২. দুর্যোগ মোকাবিলা সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, ৩. ২০২২-২৭ মেয়াদে সংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন এবং ৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অফ ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।