বাংলাদেশের অবস্থানে খুশি চীন

12

ঢাকা প্রতিনিধি

তাইওয়ান ইস্যুতে ‘এক চীন নীতি’ সমর্থনে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে একথা জানিয়ছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, বৈঠকে দুদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সই হয়েছে চারটি চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক। এছাড়াও বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, সোমবার (আজ) থেকে ভিসা এবং ট্রাভেল পারমিট চালু করবে ঢাকার চীনা দূতাবাস।
যে চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলো হলো- ১. পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতুর হস্তান্তর সনদ। ২. দুর্যোগ মোকাবিলা সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকের নবায়ন। ৩. ২০২২-২৭ মেয়াদে সংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন ও ৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাক্ষরিত নথির মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সমুদ্র বিজ্ঞানে সহযোগিতার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীন তার বাজারে আরও এক শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের একটি বড় অর্জন হচ্ছে যে, চীন তাদের বাজারে আরো এক শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে। তিনি বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে চীনের বাজারে বাংলাদেশ ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে।
আলম বলেন, চীনের মন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করার বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছেন।
বৈঠকে ওয়াং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আলম বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদ্যমান তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করেন এবং ‘এক চীন’ নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানে খুশি চীন।
তিনি বলেন, গেøাবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের বিষয়ে তারা বিস্তারিত বলেছেন। এটা আলোচনার বিষয় নয়। কারণ আমাদের প্রায়োরিটিতে আরও অন্যান্য জিনিস আছে। এটা নিয়ে তারা (চীন) নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এক চীন নীতি’ আমরা পুনর্ব্যক্ত করেছি, এজন্য চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সম্পর্কে তিনি বলেন, ওয়াং বাংলাদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য একটি সমাধান খুঁজতে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করার জন্য তার দেশের প্রতিশ্রæতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
শাহরিয়ার আলম জানান, সোমবার (আজ) থেকে চীনে ফেরত যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা এবং ট্রাভেল পারমিট চালু করবে ঢাকার চীনা দূতাবাস। করোনার কারণে দীর্ঘদিন চীনে যাত্রা বন্ধ ছিল। এ দিকে বৈঠক শেষে চীনা উপ-রাষ্ট্রদূত হুয়ালন ইয়ান তার ফেসবুকে পেজে জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঘোষণা করেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আজ (রোববার) থেকে চীনের ক্যাম্পাসে ফিরে যাবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়া হবে।
ওয়াং দুপুরে ঢাকা ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছালে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।
ওয়াং শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডি-৩২-এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শাহরিয়ার আলম বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান ।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দুই দিনের সফর শেষে গতকাল বেলা ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদায় জানান।