বাঁশখালী ভূমি অফিসে খতিয়ান সৃজনে দুর্নীতি

486

বাঁশখালী ভূমি অফিসে প্রশাসনের কড়াকড়িতেও দুর্নীতি কমছে না। ভূমিমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে হুঁশিয়ারি দিলেও বাঁশখালীর ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতি কমাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। ভূমি অফিস কেন্দ্রিক গড়ে উঠা দালালচক্রের কয়েকজনকে আটক করলেও খোদ ভূমি অফিসের কর্মচারীদের দুর্নীতির কাছে নত স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রাহকরা। ভূমি অফিসে কর্মরত তহসিলদার, কানুনগো, হেড ক্লার্ক, অফিস সহকারী ও পিয়নের দাপটে দিশেহারা ভুক্তভোগীরা। চলতি মাসেই ভূমিমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও দুদকের কাছে নামজারি খতিয়ান সৃজন ও ঘুষ চাওয়ার দুটি অনিয়মের অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ দুটি তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জানান, প্রতিদিনই নানা অভিযোগ নিয়ে ভুক্তভোগীরা আমার দ্বারস্থ হচ্ছেন। আমি সবগুলো অভিযোগের বিষয়েই খোঁজখবর নিচ্ছি। কোন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভূমি মন্ত্রীর কাছে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছেন কাথরিয়া ইউনিয়নের মানিক পাঠান এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুহাম্মদ আশরাফ আলী চৌধুরী। তিনি বাঁশখালী ভূমি অফিসের কানুনগো মমং মগ ও প্রধান অফিস সহকারী সুখলাল রায়ের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন। তিনি সুখলাল রায়ের বিরুদ্ধে মামলার নথি গায়েবের অভিযোগ আনেন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুহাম্মদ আশরাফ আলী চৌধুরী পূর্বদেশকে জানান, আমার প্রতিপক্ষ বিবাদীরা ভূয়া নামজারি খতিয়ান করে স্বত্বাধিকারী হতে চায়। অথচ বিবাদীদের কোন স্বত্ব উক্ত খতিয়ান ও দাগে নাই। এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে নামজারী আপীল মামলা দায়ের করি। মামলায় আদেশের নথি ভূমি অফিসে আসলেও সেটি গায়েব করা হয়। কাগজপত্র সবকিছু বুঝে পাওয়ার পরেও কানুনগো মমং মগ আমার কাছ থেকে ঘুষ দাবি করেন। আমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে এবং মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য ভূমি মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন উত্তর জলদী শিরিতাজ বেগম। ভূমি অফিসে ক্ষমতা অপব্যবহার করে ৮৯/১৮নং মামলা চলমান শুনানী চলাবস্থায় অনিয়মের মাধ্যমে খতিয়ান সৃজনের অভিযোগ আনেন তিনি। একই অভিযোগ তিনি জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরেও দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে দাখিলকৃত মিছ মামলা চলাবস্থায় গত ৮ আগস্ট তৎকালীন সহকারী কমিশনার মো. আরিফুল হক মৃদুল, কানুনগো মমং মগ, অফিস সহকারী দিদার ও হেড ক্লার্ক সুখলালের কারসাজিতে নতুন আরেকটি খতিয়ান সৃজন করেন। শিরিতাজ বেগমের ছেলে মানিকুল আলম পূর্বদেশকে জানান, প্রতিপক্ষ জালাল উদ্দিনের সাথে আমাদের মিছ মামলা চলমান অবস্থায় আরেকটি খতিয়ান কিভাবে সৃজিত হলো আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি তদন্তে ভূমিমন্ত্রী, দুদক, বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়েছি। বাঁশখালী ভূমি অফিসে থাকা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করছে। সম্প্রতি বাঁশখালীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন চন্দ্র রায় পূর্বদেশকে জানান, আমি আসার পর থেকে ভূমি অফিসে দুর্নীতি কমাতে কাজ করছি। দালাল ধরে জরিমানা করেছি। অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান পরিস্কার। অনিয়ম ও দুর্নীতি করে কেউ আমার কাছে অন্তত ছাড় পাবে না।