বাঁশখালীতে আ. লীগ কার্যালয়ের জমিতে বসছে মাছ বাজার!

117

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাঁশখালী সফর করেন। সে সময় তিনি উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই নামফলকটি এখনো স্বাক্ষী হয়ে থাকলেও বিগত ২৭ বছরেও আওয়ামী লীগের এ কার্যালয় আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো জায়গাটি দখলে নিতে এবার মাছ বাজার বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে একটি চক্র। ইতোমধ্যে জায়গাটি পরিষ্কার করে পৌরসভার পক্ষ থেকে বাজার বসানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
বাঁশখালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজুল হক চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার বাবা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সেক্রেটারি সৈয়দুল হক চৌধুরীর নামে দলীয় কার্যালয় করার জন্য মাত্র ছয় হাজার টাকায় জায়গাটি ক্রয় করেছিলেন। এটি কোনো খাস জায়গা নয়। খতিয়ানভুক্ত ও দলিলি জায়গা। আওয়ামী লীগের কার্যালয় করার পরিবর্তে কেউ সেখানে বাজার বসাতে পারবে না। বিষয়টি আমি মোছলেম ভাই ও মফিজ ভাইকে জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের কার্যালয় চাই। প্রয়োজনে সবাই সহযোগিতা করবো।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানার সাথে সাথে বাজার বসানো বন্ধ করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে আওয়ামী লীগের কার্যালয় হবে। এছাড়া অক্টোবরের মধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়েছে।’
বাঁশখালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা বসে এর একটি সুরাহা করবো।
দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কার্যালয় আছে কিনা জানতে চেয়ে কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে কোথাও কার্যালয় ও জমি আছে কিনা, না থাকলে কিভাবে কার্যালয় করা যাবে তার প্রস্তাবনা চাওয়া হয়। একইভাবে গত ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আওতাধীন যেসব উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নেই সেগুলোতে আগামী দুই মাসের মধ্যে দলীয় কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের এমন নির্দেশনা উপেক্ষা করেই কার্যালয় নির্মাণের পরিবর্তে নির্ধারিত জায়গায় মাছ বাজার বসানোর পাঁয়তারা চলছে।
আওয়ামী লীগের দুইজন প্রবীণ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের মালিকানাধীন জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে আলী হোছন নামে একজনকে দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি সেখানে নার্সারী করে সংসার চালানোর পাশাপাশি জাতীয় দিবসসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুল সরবরাহ করতেন। বিভিন্ন সময় জায়গাটি নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। সর্বশেষ বাঁশখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরমেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী উপজেলা সদরের বাজারটি সরিয়ে এই জায়গায় বসাতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। অথচ এ জায়গার দুই পাশেই তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলোর পাশে বাজার বসালে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে।
বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ধর পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা বাজার বসানোর কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরও যদি কেউ বাজার বসানোর পাঁয়তারা করে প্রতিহত করবো। এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আপনারাও সহযোগিতা করবেন।’
বাঁশখালী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মৌলভী নুর হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির আমলে এ জায়গা নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আমরা মাঠে নেমেছিলাম। এতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও কার্যালয় না করাটা দুঃখজনক। আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মোটা অংকের টাকা লেনদেন করে মেয়রের নেতৃত্বে একটি চক্র মাছ বাজার বসাতে চায়। কার্যালয়ের পরিবর্তে মাছ বাজার হলে তা হবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য অপমানের। এ ঘটনা তদন্তে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় দলীয় কার্যালয়ে জায়গা দখলের বিরুদ্ধে আমরা আবারো মাঠে নামতে বাধ্য হবো।’
এ বিষয়ে জানতে পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরমেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেয়রের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, পৌরমেয়র ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বিষয়টি কারো সাথে আলাপ না করেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।