বাঁশখালীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই সহোদর নিহত

143

বাঁশখালীর উপকূলীয় ইউনিয়ন সরল। পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। মাঝখানে জলকদর খাল। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, অনুন্নত জনপদ। প্রকৃতির এমন প্রভাব নিজেদের পক্ষে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। অস্ত্র কেনাবেচা, লবণ মাঠ দখল, সাগরে ডাকাতি সবখানেই নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখে সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো। কখনো কখনো নিজেরাই গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে। দু’পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে। এভাবেই সেখানে নিজের সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল দুর্ধর্ষ ডাকাত জাফর আহমদ প্রকাশ জাফর মেম্বার।
রাতের আঁধারে পুলিশ ও র‌্যাব জাফরকে ধরতে কয়েক দফা ব্যর্থ হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার কৌশল পাল্টে গ্রেপ্তার করতে গেলে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় দুই ভাই জাফর আহমদ (৪৫) ও তার ভাই খলিল আহমদ (৪০)। তারা সরল ইউনিয়নের মধ্যম সরল গ্রামের ২নং ওয়ার্ডের মৃত মো. জয়নাল আবেদীনের পুত্র। পশ্চিমের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌনে ১২টার দিকে বন্দুকযুদ্ধে তারা মারা যায়।
র‌্যাব-৭ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাশকুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, অস্ত্র উদ্ধারে গেলে র‌্যাবকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে ডাকাতদল। এসময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থল
থেকে দুইজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী অস্ত্রসহ আটটি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গুলি ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘র‌্যাব সদস্যরা সকালের দিকে সরলে অভিযান যায়। সেখানে র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে পাল্টা গুলিতে জাফর ডাকাত ও তার ভাই খলিল মারা যায়। র‌্যাব আমাদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাইলে বাঁশখালী থানা পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। ডাকাত জাফরের বিরুদ্ধে পাঁচটি ডাকাতি, তিনটি অস্ত্র ও তিনটি হত্যা মামলাসহ মোট ২৭টি মামলা আছে। এরমধ্যে ১১টি মামলায় ওয়ারেন্ট আছে। তবে খলিলের বিরুদ্ধে কোন মামলা না থাকলেও সে জাফরের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। জাফর ২০ বছর বয়স থেকেই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দুর্ধর্ষ ডাকাত জাফরকে অনেকেই মদ্দ ডাকাত নামেই চিনে। পেশাদার এই ডাকাত এলাকার জনপ্রতিনিধিও হয়েছিল বলে কেউ কেউ জাফর মেম্বার বলে ডাকেন। পুলিশ কয়েকদফা তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালালেও তা আগেভাগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় জাফর আত্মগোপনে চলে যায়। প্রধান সড়ক থেকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা সরলের উদ্দেশ্যে গেলেই জাফর ডাকাত অন্যত্র চলে যেতো। রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে জাফর ডাকাত বাড়িতে না থাকলেও দিনের বেলায় বাড়িতেই থাকতো। সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে র‌্যাব। গোপনে দিনের বেলায় জাফর ডাকাতের আস্তানায় হানা দিলে সেখানেই বন্দুকযুদ্ধে জাফর ও তার ভাই মারা যায়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাফর ও নুর মোহাম্মদ গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। এই দুই গ্রæপের হাতে বেশকিছু অবৈধ অস্ত্র থাকার তথ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এমনকি নুর মোহাম্মদ গ্রæপের প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে জাফর গ্রæপের দুইজন বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর নুর মোহাম্মদসহ সরলের বিবাদমান গ্রæপগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা ইতোমধ্যে আত্মগোপনে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরলের দুর্ধর্ষ ডাকাত জাফর ও তার ভাইয়ের মৃত্যুতে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। শত শত মানুষ তাদের দুইজনের লাশ দেখতে ঘটনাস্থলের আশপাশে ভিড় জমায় এবং র‌্যাব সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জানা যায়, বাঁশখালীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বাঁশখালীতে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং অস্ত্র মজুদ করে একটি চক্র ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করছে। সরলে এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের দাপট কিছুটা কমতে পারে। তবে আরো কয়েকজন সন্ত্রাসী এখনো সেখানে বিশৃঙ্খলা করার শঙ্কা আছে। চাম্বলের ইরান ও জাকের নামে দুইজন অস্ত্রধারী দুর্ধর্ষ ডাকাত আছে যারা প্রতিনিয়ত মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ছনুয়াতেও কয়েকজন অস্ত্রধারী আছে।
বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) কামাল উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘কোন সন্ত্রাসী পার পাবে না। কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে এলাকার পরিবেশ অশান্ত করলে তাকে সারাজীবন অশান্তির মধ্যেই দিনযাপন করতে হবে। সন্ত্রাসীদের জন্য সবসময় ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।’