বাঁশখালীতে পুনঃনিরীক্ষণে জানা গেল খাতাটি ‘উধাও’

63

বাঁশখালীতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া এক শিক্ষার্থী আরো বেশি নাম্বার পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে। আবেদনের পরেই বড় ধরনের জালিয়াতির আভাস মিলেছে। এখন ওই শিক্ষার্থীর ইংরেজী বিষয়ের খাতাটিও ‘উধাও’। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস গঠিত দুই সদস্যের কমিটি। ইতোমধ্যে কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন।
পুনঃনিরীক্ষণে খাতা উধাও হওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন সুলতানা পূর্বদেশকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ইতোমধ্যে ঘটনা তদন্তে দুইজন সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। উনারা তদন্ত করছেন। সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলেই তদন্ত প্রতিবেদন দিবেন। প্রতিবেদন পেলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানা যায়, উপজেলা সদরের বাঁশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০১৮ সালের পিইসি পরীক্ষার্থী ছিল মো. সাইয়ান মুনতাসির নিয়ান। রোলনম্বর ৫৪০৯। মেধাবী এই শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে ৫৫৮ নম্বর পেলেও তার অভিভাবকেরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে ইংরেজি, গণিতসহ চার বিষয়ে খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন। আবেদনের পরেই বের হয়ে আসে আসল রহস্য। ফলাফল শিটে ৯৫ নম্বর পেলেও ইংরেজি খাতাটি ‘গায়েব’ করার মতো অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় পরীক্ষার্থীর অভিভাবক মো. শাহাজাহান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার ছেলে পিইসি ফলাফলে পেয়েছে ৫৫৮ নম্বর। কিন্তু তার ৫৯৫ নম্বর পাওয়ার কথা। এ ফলাফলে সন্তুষ্ট হতে না পেরে আমি পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছি। পরে শোনা যাচ্ছে খাতাটি পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি আমি মেনে নিব না। প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে যাব। বিষয়টি নিয়ে আজ (বুধবার) আমাকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফোন দিয়ে জানালেন আমার সাথে একটু কথা আছে। আমি ব্যস্ত আছি জানালে রাতে বলবেন বলেছেন। আমি জানতে পেরেছি আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা চলছে।’
বাঁশখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার একেএম মোস্তাক আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, পুনঃনিরীক্ষণে খাতা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে একজন সহকারী শিক্ষা অফিসার প্রধান পরীক্ষক ও উত্তরপত্র মূল্যায়নে যুক্ত শিক্ষককে ডেকে কথা বলেছেন। আমিও আগামীকাল (আজ) এ বিষয়ে কথা বলতে যাব। ইংরেজি বিষয়ের খাতাটি এখনো পাওয়া যায়নি। আমরা খোঁজাখুঁজি করছি। কোনো শিক্ষক জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। কি কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইংরেজি খাতা মূল্যায়নে যুক্ত থাকা কানুনগোখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মোস্তাফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি একসাথে এক বান্ডিল খাতা কেটেছি। কে কত নম্বর পেল সেটি জানি না। সব খাতা অফিসে জমা দিয়েছি। হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুইজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘জালিয়াতি করে অন্যজনকে প্রথমস্থান পাইয়ে দিতে এমন কান্ড করা হয়েছে। তদন্ত করলেই বিষয়টি বের হবে। ইংরেজি খাতাটি হারিয়ে গেলেও ছেলেটি ৯৫ নম্বর পেয়েছে দেখানো হয়েছে। এরকম জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীর খাতা তদন্ত করলেই আসল জালিয়াতি বের হবে।’