বাঁধ সরলেও খাল থেকে সরেনি প্রতিবন্ধকতা

50

এম এ হোসাইন

বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার কারণে সেবা সংস্থাগুলোর চাপ ও নগরবাসির সমালোচনার মুখে কিছু খালের বাঁধ অপসারণ হলেও খালের মাঝখানের মাটি এখনো অপসারণ করা হয়নি। মাটি অপসারণ না হওয়ায় পদে পদে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া পলিথিন ও বর্জ্যরে স্তুপ জমছে অনেক জায়গায়। ফলে খালে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে নগরীর নিম্নাঞ্চলে পানি জমছে। দুর্ভোগের মাত্রা বাড়ছে নিম্নাঞ্চলের মানুষের।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন বিষয়ক মেগা প্রকল্পের কাজের জন্য বিভিন্ন খালে দেয়া হয়েছিল বাঁধ। খালের মুখে স্লুইসগেট ও প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণ কাজের কারণে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে বাঁধ দেওয়া হয়। বর্ষার আগে বৃষ্টিতে নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিলে এসব বাঁধকে মূল প্রতিবন্ধক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে এসব বাঁধ অপসারণের জন্য সিডিএ’র প্রতি দাবি জানিয়ে আসছিলেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। ৩০ জুনের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বাঁধ অপসারণে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বাঁধ অপসারণ করা হয়নি। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ হিসেবে নগরের বিভিন্ন খাল ও নালায় পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করা ৩৯টি অস্থায়ী বাঁধ ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। জুন মাসে এই তালিকা করে সিটি কর্পোরেশন। এরমধ্যে ক্রমান্বয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিলে অনেক বাঁধ কেটে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। বাঁধ কেটে দিয়ে পানি চলাচলের সরু পথ করে দেয়া হলেও পুরো বাঁধের মাটি অপসারণ করা হয়নি। খালের মধ্যে মাটি থেকে যাওয়ায় পানি চলাচলে নিয়মিত প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি নামছে ধীর গতিতে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও প্রকল্প পরিচালক মো. শাহ আলী বলেন, খালের মাটি আমরা সরিয়েছি। যদি মাটি থাকতো তাহলে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করতাম। কিন্তু পরিস্কার করা খালে ককসিট, প্ল্যাস্টিক, বাসা-বাড়ির বর্জ্যগুলো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বর্জ্য পরিস্কার আমার প্রকল্পের কাজে পড়ে না। প্রতিটি ব্রিজের নিচে আমরা সপ্তাহে দুইবার করে এসব বর্জ্য পরিষ্কার করছি। সবগুলো বর্জ্য ব্রিজের নিচে এসে জমাট হয়ে থাকে।
নগরীর ৩৬টি খালে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় সবগুলো খালের কোথাও না কোথাও কাজের সুবিধার্থে বাঁধ দিতে হয়েছে। জলাবদ্ধতা দেখা দিলে পানি অপসারণে প্রায় খালের বাঁধ কেটে দেওয়া হয় বলে বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়। কিন্তু এখনো ফিরিঙ্গিবাজার খাল, মরিয়ামবিবি খাল, টেকপাড়া খালসহ কয়েকটি খালে বাঁধ থাকার তথ্য রয়েছে। আবার কয়েকটি খালে বাঁধের সাথে পাইপ বসিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া যেসব খালের বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে সেখানে এখনো মাটির স্তুপ সরানো হয়নি বলে অভিযোগ আছে। এসব প্রতিবন্ধকতা থেকে যাওয়াতে অল্প বৃষ্টিতেই নগরীর দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, ওয়ারল্যাস, প্রবর্তক মোড়, শুলকবহর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা, খাতুনগঞ্জ, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, পশ্চিম বাকলিয়াসহ নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকার নিয়মিত পানি উঠছে।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গৃহীত ৫ হাজার ৬’শ ১৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক চলমান মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএ’র সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল নালা পরিষ্কার করার কাজের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন করা, খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা বাড়ানো, মাটি উত্তোলন, প্রতিরোধ দেওয়াল দেয়া, ড্রেন সংস্কার ও নতুন ড্রেন তৈরি করাসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়। গত বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়াতে বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ।