বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাখ্যান

50

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কৃত ৩১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছে কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ। এসময় তারা বহিষ্কৃতদের অধিকাংশকে নির্দোষ দাবি করে চমেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাত, ছাত্রলীগ বিদ্বেষী ও শিবিরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ করেন।
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন চমেক ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চমেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি কে এম তানভীর।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চমেকের একাডেমিক কাউন্সিল বৈধ নয়। তারা ছাত্র বহিষ্কারের নামে ভন্ডামি করেছে। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অধ্যক্ষ চমেক হাসপাতালের পরিচালককে আমন্ত্রণই জানাননি।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করে তানভির বলেন, চমেকের ছাত্র মাহাদি আকিবের ওপর হামলাকারীরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চিহ্নিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে এই ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তবুও অধ্যক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে গিয়ে আকিব হামলার শিকার হয়েছেন। এই হামলায় অংশ নেন ১৬ জন সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ২৩ জনকে কোনোধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কার করা হয়েছে।
চমেক অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ বিদ্বেষী ও ক্যাম্পাসে জামায়াত-শিবিরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তার স্বামী জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত আইআইএমসি’র অধ্যক্ষ। তিনিই মূলত চমেক পরিচালনা করছেন। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়তপন্থি কয়েকজন শিক্ষককে চমেকের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান করা হয়েছে। তাদের অনেককে বিভিন্ন পরীক্ষায় পরীক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। এভাবে তিনি জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ১৯৯৩ সালে ক্যাম্পাসে সংঘটিত ট্রিপল মার্ডারের মূল হোতা নিজের ঠিকাদারি ও সরবরাহ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন। দুদকের তদন্তে কোণঠাসা হয়ে পড়া এই ঠিকাদার চিকিৎসকই ক্যাম্পাসে কতিপয় ছাত্রকে বিভ্রান্ত করছেন। অধ্যক্ষের সঙ্গে বসে তার দুই ছায়াসঙ্গী বহিষ্কারাদেশের তালিকা প্রণয়নের পর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। ছাত্রলীগ এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনারও জোর দাবি জানানো হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে কে এম তানভীর বলেন, বিএমএ নেতা ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর প্রেসক্রিপশনে বহিষ্কারাদেশের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র সংসদের দু’জন প্রতিনিধি একাডেমিক কাউন্সিলে আছেন। আমরা বারবার অধ্যক্ষকে ছাত্র সংসদ বিলুপ্ত করার কথা বললেও তিনি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিনি চমেক ক্যাম্পাসে জাতীয় শোক দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সরস্বতী পূজায় বাধা দেন। ছাত্রলীগের জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মসূচিতে বাধা দেন। তার মদদে ক্যাম্পাসে জামায়াত-শিবির ছদ্মবেশে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংবাদ সম্মেলনে চমেক প্রধান ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমানেরও পদত্যাগ দাবি করা হয়। এসময় চমেক ছাত্রলীগ নেতা খোরশেদুল ইসলাম এবং মো. ফয়েজ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ছাত্রলীগের অপর পক্ষও চমেক একাডেসিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং পূর্ববর্তী ঘটনাসমূহের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছে। গতকাল বুধবার কলেজ ছাত্রলীগের আসেফ বিন তাকি ও মাহাদী বিন হাসিমসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবরের ঘটনায় একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক তদন্ত কমিটি ৩১ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে অনেক নির্দোষ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে তারা উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকা চিকিৎসক নেতা আ ম ম মিনহাজুর রহমানের সরাসরি ইন্ধনে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে হামলাগুলি সংঘটিত হয়েছে। এই ডাক্তার নেতাকে বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যাপক, ডাক্তার এমনকি অধ্যক্ষকেও হুমকি দিতে দেখা গেছে। তাকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে অমূলক, অসত্য তথ্য উপস্থাপন করতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দীর্ঘদিনের গলার কাঁটা অবৈধ দালাল ব্যবসা চালু রাখার মাধ্যমে তার নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে তিনি এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সরাসরি ইন্ধন দিয়ে আসছেন।
তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ ইতোমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে। একইসাথে প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার জোর জানান তারা।