বস্তি থেকে বলিউডের কিংবদন্তি কমেডিয়ান

173

ব্লকবাস্টার ‘বাজিগর’ ছবিতে শিল্পপতি চোপড়া পরিবারের পরিচারক বাবুলাল ছিল ভুলোমনের। পর্দার বাইরে বাবুলাল চরিত্রের কারিগর জনি লিভারের কিন্তু স্পষ্ট মনে পড়ে নিজের তিক্ত অতীত। যখন তিনি হিন্দি সিনেমার অভিনেতাদের নকল করে কলম বিক্রি করতেন। জনি লিভারের জন্ম ১৯৫৭ সালের ১৪ আগস্ট অন্ধ্রপ্রদেশের কানিগিরিতে। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে তার বেড়ে ওঠা মুম্বাইয়ের কিংস সার্কল এলাকার ধরাভি বা ঘিঞ্জি বস্তিতে। ছোটবেলায় তার নাম ছিল জন। বাবার নাম প্রকাশ রাও জানুমালা। মা, করুণাম্মা। ছোটবেলা থেকেই মিমিক্রি করার অদ্ভুত ক্ষমতা জনির। একবার নিজের অফিসের অনুষ্ঠানে মঞ্চে নকল করে দেখাচ্ছিলেন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের। তুমুল জনপ্রিয় হয় তার পারফরম্যান্স। সংস্থার কর্মীরা তার নতুন নাম দেন। ওই অনুষ্ঠানের পর থেকে ‘জন রাও’ হয়ে গেলেন ‘জনি লিভার’। তিনি তখন কাজ করতেন হিন্দুস্তান লিভার প্রাইভেট লিমিটেডে। ‘লিভার’ শব্দটা নিজের নামে রেখেই দেন তিনি।
পরবর্তী কালে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত হন ‘জনি লিভার’ নামেই। জনি পড়তেন অন্ধ্র এডুকেশন সোসাইটি ইংলিশ হাই স্কুলে। কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতেই বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের পর্ব। অর্থাভাবে আর এগোয়নি পড়াশোনা। বাধ্য হয়ে জনি রাস্তায় কলম বিক্রি করতেন। সঙ্গে চলত বলিউড তারকাদের মিমিক্রি। মাঝে মাঝে জনপ্রিয় হিন্দি গানের সঙ্গে নাচতেনও। এছাড়া নানা রকমের কাজ করেছেন তিনি। তারপর হিন্দুস্তান লিভার সংস্থায় চাকরি। তবে সে চাকরিও ১৯৮১ সালে ছেড়ে দিলেন। কারণ তখন তার স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসেবে নামডাক হতে শুরু করেছে। ক্রমে জলসা জমাতে জনি লিভার হয়ে উঠলেন অপরিহার্য। শো করে ফেললেন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও। এরকমই এক শোয়ে তার প্রতিভা চোখে পড়ল সুনীল দত্তের। তিনি জনিকে সুযোগ দেন ‘দর্দ কা রিস্তা’ ছবিতে। এটাই জনি লিভারের প্রথম ছবি। এরপর ‘হত্যা’, ‘তেজাব’, ‘চালবাজ’, ‘জাদুকর’, ‘মুজরিম’, ‘খিলাড়ি’, ‘চমৎকার’, ‘রূপ কি রানি চোরো কি রাজা’, ‘আনাড়ি’সহ বেশ কিছু সফল ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় অভিনয় করেন জনি। তার কেরিয়ারের প্রথম নজরকাড়া ছবি ‘বাজিগর’। ইন্ডাস্ট্রিতে তাকে পায়ের তলায় শক্ত জমি দেয় এই ছবির ‘বাবুলাল’ চরিত্রটি। সাড়ে তিন দশকের কেরিয়ারে জনি লিভার অভিনয় করেছেন ৩০০টিরও বেশি ছবিতে। কমেডি জগতে নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন কিংবদন্তি হিসেবে।