বর্ষায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা থাকছেই অল্প বৃষ্টিতেই কোমরপানি নগরে

36

নিজস্ব প্রতিবেদক

বরাবরের মতো অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা থেকে এমন জলাবদ্ধতা। মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার পরও অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় সামনের বর্ষা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে নগরবাসী। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, শতভাগ কাজ শেষ না হলে জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলবে না।
গতকাল শনিবার ভোর থেকে হালকা বৃষ্টিপাত হয়। সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫ মিলিমিটার এবং বিকাল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৪৮ মিলিমিটার। এই অল্প বৃষ্টিতেই নগরের চকবাজার, প্রবর্তক, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, গোসাইলডাঙ্গা, শান্তিবাগ, হালিশহর, চান্দগাঁও, কল্পলোক আবাসিক, বাকলিয়াসহ নগরের নিচু এলাকায় কোথাও কোমর পানি আবার কোথাও হাঁটু পানি জমে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে অফিসগামী এবং বিভিন্ন কাজে বের হওয়া মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। বাধ্য হয়ে মানুষজনকে পানি মাড়িয়ে হেঁটে বা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশায় করে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক রাস্তায় গাড়ি চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষজনের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৫ মিলিমিটার এবং বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের অধীনে নগরীর ৩৬টি খালে কাজ করছে সেনাবাহিনী। এসব খালের মধ্যে ৭টি খালের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়াতে সেগুলো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) বুঝিয়ে দিতে চান তারা। তাছাড়া আগামী জুনের মধ্যে আরো ১১টি খালের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করে বুঝিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু খালের কাজ শেষ হওয়াতে এসব খালে পানি প্রবাহ বাড়বে। ফলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে থাকবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বর্ষার আগেই সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন এলাকা। এতে বর্ষা নিয়ে নতুন শঙ্কার মধ্যে আছে নগরবাসী।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, কিছু খালের কাজ আমরা শেষ করেছি। বাকি খালের কাজ চলমান আছে। বর্ষার আগে জলাবদ্ধতা হয় এমন খালগুলো পরিষ্কার করে দেয়া হবে। যে সব খালের মধ্যে বাঁধ থাকলে সমস্যা হবে না, সেগুলো ছাড়া বাকি সব খালের বাদ অপসারণ করা হচ্ছে। কাজ শতভাগ শেষ না হলে পুরোপুরি প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করা যাবে না। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া কাজের কিছু সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য খালগুলো পরিষ্কার করা ছাড়াও খালের মুখের জলকপাট বা স্লুইস গেটকে নিরামক হিসাবে দেখা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান তিনটি প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের কথা আছে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসব জোয়ার প্রতিরোধক ফটক নির্মাণ করছে। তিনটি প্রকল্পই নির্ধারিত মেয়াদে শেষ না হওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয়েছে। মেগা প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৫টি স্লুইস গেট, নগরের চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীরে বাঁধসহ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১২টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২৩টি সহ মোট ৪০টি স্লুইস গেট নির্মাণের কথা রয়েছে। দুই প্রকল্পের অধীনে সিডিএ’র ১৭টি স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চললেও এখনো কাজ সমাপ্ত হয়নি। অন্যদিকে এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে করে কোনো একটি প্রকল্প শেষ হলেও পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না বলে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সিডিএ’র পরিচালক প্রকৌশলী আহমেদ মাইনুদ্দিন বলেন, শতভাগ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না। ৫০ শতাংশ কাজ হলেই যে ৫০ শতাংশ জলাবদ্ধতামুক্ত হবে বিষয়টা এমন না। শতভাগ কাজ না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি সুফল আসবে না। তবে কিছু কিছু সুফল আসবে। যেমন আগে প্রবর্তক মোড়ে পানি উঠতো, এখন সেখানে পানি উঠে না। বহদ্দারহাটে পানি কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকতো, এখন অল্প সময়ে পানি নেমে যায়। এভাবে অল্প অল্প করে সুফল আসবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৭৩ কোটি ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ এবং ৩ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়। ইতিমধ্যে ২ হাজার ১১১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে এ প্রকল্পে। ২০১৯ সালে শুরু হয় এ প্রকল্পের ভৌত কাজ। এবছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্প মেয়াদ আরো দুইবছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।