বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা টাকা পরিচ্ছন্নতার জন্য ৭ শতাংশ কর

61

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্জ্য সংগ্রহে ‘সফলতা’ দেখাতে না পেরে তা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ইতোমধ্যে দুইটি ওয়ার্ডের বর্জ্য সংগ্রহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে দিয়ে দিয়েছে। পরিচ্ছন্নতার জন্য বাড়িভাড়ার ৭ শতাংশ কর আদায় করলেও আবার একই সেবার জন্য চসিকের নিয়োগকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে মাসিক চাঁদা দিতে হচ্ছে মালিক ও ভাড়াটিয়াদের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা সমালোচনা। তবুও আগামী মাসের মধ্যে আরও তিনটি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতার কাজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিতে প্রস্তুত চসিক।
পর্যায়ক্রমে নগরীর ২৫টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতার কাজ আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে করানোর তথ্য নিশ্চিত করে মেয়রের একান্ত সচিব ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম পূর্বদেশকে জানান, ‘আগামী মাসের মধ্যে ২, ৪ এবং ৬নং ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করানো হবে। তবে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য যে টাকাটি ভবন মালিকরা দিবেন তা গৃহকরের সাথে সমন্বয় করার চিন্তা করা হচ্ছে। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মেয়র মহোদয় এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।’
ইতোমধ্যে নগরীর ২৪নং উত্তর আগ্রাবাদ ও ৭নং ষোলশহর ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সংগ্রহ করছে চসিক অনুমোদিত দুইটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। উত্তর আগ্রাবাদে ‘মেসার্স পাওয়ার সোর্স’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ও ষোলশহর ওয়ার্ডে ‘চট্টগ্রাম ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া রশিদ দেখে জানা গেছে, প্রতিটি বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহের জন্য আদায় করছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দোকান থেকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় দেড় হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এছাড়া শিল্প কারখানা থেকে ৩ থেকে দশ হাজার টাকা, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি ১০০ জনের সৃষ্ট বর্জ্যে ২০০ টাকা। শপিংমল ও মার্কেট থেকে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা, ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এ নিয়ে সমালোচনা চললেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখন ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ করা হতো তখনও বর্জ্য সংগ্রহের জন্য টাকা আদায় হতো। বিভিন্ন সোসাইটির পক্ষ থেকে, স্থানীয় প্রভাবশালীরা এ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন সেটাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে চসিক।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক এড. আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘যদি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করতে হয়, তাহলে সিটি করপোরেশনের কাজ কি? তারা কেনো অথেরিটি হয়ে থাকবে? আর মানুষ যদি সোসাইটিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য সংগ্রহ করে ডাস্টবিনে রাখে, তাহলে ভবনমালিকদের কর দিতে হবে কেনো। এভাবে চললে সিটি করপোরেশনের উচিত পরিচ্ছন্নতা কর না নেওয়া। নাগরিকের পক্ষ থেকে এমনই দাবি করবো। যা মন চায় তা করার জন্য তো মানুষ ভোট দিয়ে মেয়র বানান না। তিনি তো চট্টগ্রামের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তিতে রূপ নিচ্ছেন।’
একই বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান করদাতা সুরক্ষা পরিষদের এক গণশুনানিতে বলেন, ‘আমি একটি ল্যাব চালাই। খুবই সুন্দরভাবে বর্জ্যগুলো একটি ডাস্টবিনে রাখা হয়। সিটি করপোরেশন সেগুলো নেওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দিয়েছেন যারা মাসে ১৫শ টাকা করে নেয়। এখন কথা হলো, এসব সিস্টেমের কারণে কিছু সংখ্যক লোক টাকা কামিয়ে যাচ্ছে। মাঝে সরকার এবং জনগণের দূরত্ব বাড়ছে। তাই এসব বিষয়ে মেয়রের সঠিক অবস্থানে আসা উচিত।’
এ বিষয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সেবক দিয়ে নালা-নর্দমা পরিষ্কার, মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি স্টেশনে রাখবে। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবে।’
তবে পরিচ্ছন্নতার কর ও মাসিক চাঁদা দুটোই দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এ অভিযোগের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘আমরা গৃহকর খুবই সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসছি। নামমাত্র পরিচ্ছন্নতা কর নেওয়া হচ্ছে। ১৬টি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কর নেই। বাকি ২৫টি ওয়ার্ডে ধাপে ধাপে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। পুরো ২৫টি ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রদেয় টাকা ও গৃহকরের সমন্বয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।’