বন্যায় ভাসছে সিলেটবাসী

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

মে মাসের বন্যায় দেড় যুগ পর ঘরে পানি ঢুকতে দেখল সিলেট নগরবাসী, আর গ্রামে স্রোতের তোড়ে ভেসে গেল আসবাব, কোথাও কোথাও ঘরও। তবে পানি কমতে শুরু করায় লাখো মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠা হঠাৎ বন্যার আর ‘অবনতি’ না হওয়ার আভাস দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উজানের ভারি বর্ষণের মধ্যে আকস্মিক বন্যায় দুদিন থেকে সিলেটবাসী একপ্রকার ‘হাবুডুবু’ খাচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো বন্যা কবলিত হয়েছে বেশি।
দেশের ভেতরের বৃষ্টিও বাড়িয়েছে দুর্ভোগের মাত্রা। সুনামগঞ্জে হাসপাতালেও পানি ঢোকার খবর এসেছে।
দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে সিলেট-সুনামগঞ্জের মানুষের এমন দুর্দশার মধ্যে একটু হলেও ভালো খবরের আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকোশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া শুক্রবার বলেন, এখন আর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে না বলে আশা করা যায়। পানি কমতে শুরু করেছে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এখন দেশের অভ্যন্তরেও বৃষ্টিপাত কমে এসেছে।
তবে সব জায়গায় যে সমানতালে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে তা নয়। কেন্দ্রের পূর্বাভাস বলছে, সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে আগামী এক দিনে। খবর বিডিনিউজের।
উজানের ভারি বর্ষণের মধ্যে যখন আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন দেশের ভেতরের বৃষ্টিও পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ভূমিকা রাখে। এতে এসময়ে মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়ে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢলে এবার বিস্তীর্ণ এলাকায় আকস্মিক বন্যা হল। দেশের উজানেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে, দুই থেকে পাঁচ দিনের টানা বর্ষণ এবং একই সময়ে দেশের অভ্যন্তরেও ভারি বর্ষণে নদী-নালা, খালবিল ভরে গেছে। নদ-নদীর পানি উপচে দ্রুত প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। এত অল্প সময়ে প্রচুর বৃষ্টি সাম্প্রতিক সময়ে কম হয়েছে। ২০০৪ সালের দিকেও এমন হয়েছে। আগামীতে যে এমন হবে না তা নয়।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, হঠাৎ আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো দুর্গত হয়েছে বেশি। সেই সঙ্গে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পর এবার বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে বানের পানিতে। শুক্রবার সকালে পানি ঢুকেছে সুনামগঞ্জ শহরের কালিপুর, ওয়েজখালি, হাজিপাড়া, তেঘরিয়া, নবীনগর, পূর্ব নতুনপাড়া, হাসননগরসহ কয়েকটি এলাকায়।
সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের সড়ক ও সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কয়েক জায়গায়। পানি উঠে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও।
সুনামগঞ্জে বন্যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই দুই জেলার নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। বানের তোড়ে অবকাঠামোগত ক্ষতির পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় দিতে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বরাদ্দ করা হয়েছে শুকনো খাবার ও চাল। পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে বন্যা দুর্গতদের জন্য।