বন্যায় ক্ষতি এবং করণীয়

702

আ. জ. ম. সামশুল হক

ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিষয়। প্রতি বছর আমাদের দেশে কম-বেশি বন্যা হয়ে থাকে। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বন্যা হওয়া স্বাভাবিক। তাছাড়া ভৌগোলিক কারণে আমাদের ভাটির দেশ ঝড় ও বৃষ্টিতে বন্যার কবলে পড়ে। বন্যার উৎস হিসেবে আমরা সাধারণত বৃষ্টিকে নির্ণয় করে থাকি। একদিকে বৃষ্টি এবং অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপাল থেকে পানি প্রবাহের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে রাস্তা- ঘাট ও বাড়িঘর ডুবে যাওয়াকেই আমরা বন্যা বলে আখ্যায়িত করে থাকি। বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ঘরবাড়ি ,রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বন্যায় গরিব মানুষের অবর্ণনীয় ভোগান্তি। গরিব না খেয়ে দিন পার করতে হয় এবং অনেকের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। বন্যাজনিত কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর , সর্দি, কাশি এবং চর্মরোগ দেখা দেয়। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে এবং তাতে পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বন্যা হওয়ার পিছনে যে কারণটি মুখ্য তা হচ্ছে, দখলদারেরা খাল ভরাট করে অপরিকল্পিত ভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা,। তাছাড়া সরকারি জমি দখল এবং মাছের চাষ করা। বন্যায় নদীর দু’কুল প্লাবিত হওয়ার কারণে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে । তাতে অনেক বাড়িঘর জায়গা- জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কাজেই আমাদের এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং নিম্নেবর্ণিত বিষয়ে সচেষ্ট থাকা আমাদের কর্তব্য।
*বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা এবং পুনর্বাসন কর্মসুচী চালু রাখা । *বন্যার্তদের প্রয়োজনে – খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ঔষধ এবং কাপড় – চোপড় প্রদান অব্যাহত রাখা। * অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড , হেপাটাইটিস এবং মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। * সাহায্য ও ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে নারী ও বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া। * ত্রাণসামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণের জন্য পুলিশ, আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী , সামরিক বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীদের দায়িত্ব প্রদান করা। * বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ পাঠানো যেমন জরুরি, সঠিকভাবে বণ্টন হল কিনা , তা মনিটরিং করাও জরুরি। * বন্যা দুর্গতদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সব রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিত্তবানদের বন্যা দূর্গতের সাহায্যে এগিয়ে আস্তে হবে . * বিশুদ্ধপানি পাওয়া না গেলে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। * বন্যাকবলিত যেকোন রোগের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে ঘন ঘন মুখে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। * বন্যা পরবর্তীতে বাড়িঘর , পয়নিষ্কাশনসহ বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। যেহেতু পানি নামার সাথে সাথে চতুর্দিক এক দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। * বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসন, সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি উপকরণ সহ ভর্তূকির ব্যবস্থা করতে হবে। * পানি প্রবাহের জন্য দখল কৃত খালগুলো উদ্ধার করা জরুরি। লেখক : প্রাবন্ধিক